• শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ০৮:৫২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
এক নজরে বাংলাদেশ, সবচেয়ে বড় গ্রাম বানিয়াচং, ছোট গ্রাম তিলইন রাজশাহী বাঘায় ফেন্সিডিলসহ এক মাদক ব্যবসায়ী র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার রাজশাহীতে চলছে দুই উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, ভোটার উপস্থিতি কম পুকুর খননের মাটিবাহী ট্রাক্টর চাপায় যুবকের মৃত্যু পুঠিয়ায় র‌্যাবের হাতে ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেটসহ ৫ মাদক ব্যবসায়ী আটক গোমস্তাপুরে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীর মুক্তিযোদ্ধার দাফন সম্পন্ন বাগমারায় আবুল হাশেমের মৃত্যুতে এমপি কালামের শোক প্রকাশ রাজশাহীর বাগমারায় আগুনে পুড়ল ১০০ বিঘা জমির পানের বরজ রাজশাহীর বাঘায় ১০০ বোতল ফেন্সিডিল সহ ১ জন গ্রেফতার পুঠিয়া সদর ইউপি নির্বাচনে জাহাঙ্গীর আলম জুয়েল চেয়ারম্যান নির্বাচিত

শিবির থেকে ছাত্রদল, এখন তিনি রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি

সংবাদদাতা:
সংবাদ প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২

বিডি নিউজ২৩: ছিলেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মী। পরে ২০১৬ সালে রাজশাহী কলেজ মুসলিম হল শাখা ছাত্রদলের ৬ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক হন সাকিবুল ইসলাম রানা। এই কমিটি বিলুপ্তির দুই বছর পরই তিনি হয়ে যান রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি। শুধু ছাত্রদল করাই নয়, নারীর সঙ্গে অশ্নীল ভিডিও ভাইরাল, অনৈতিক প্রস্তাব, মদ্যপ অবস্থায় নগরীতে মাতলামি করার সময় এলাকাবাসীর পিটুনি খাওয়াসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

 

অভিযোগ রয়েছে, সভাপতি হওয়ার আগে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয়ের বাড়ির বাজার করা, ফরমায়েশ খাটাসহ ছোটখাটো সব কাজই করে দিতেন সাকিবুল ইসলাম রানা। এ কারণে জয়ের মা-বাবার স্নেহের পাত্র বনে যান এই সাবেক ছাত্রদল নেতা। মায়ের আবদারেই রানাকে রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বানান জয়। পাশাপাশি একজন প্রতিমন্ত্রী সুপারিশ ও সমর্থন করেন তাঁর জন্য।

 

অভিযোগ শুধু রানার বিরুদ্ধেই নয়; গত ২৪ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্র ঘোষিত ৩০ সদস্যের রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের অনেক নেতার বিরুদ্ধেই রয়েছে নানা অভিযোগ। মানুষকে ধরে এনে নির্যাতন, মদ-ফেনসিডিল খেয়ে মাতলামি করা এবং ছাত্রদল করার অভিযোগ অনেকের বিরুদ্ধে।

 

ছাত্রদল থেকে ছাত্রলীগ সভাপতি

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী কলেজ মুসলিম ছাত্রাবাসের ৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করেন কলেজ ছাত্রদল সভাপতি মুর্ত্তজা ফামিন ও সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মাকসুদুর রহমান সৌরভ। এই কমিটির ৬ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক সাকিবুল ইসলাম রানা। টানা তিন বছর এই কমিটির সক্রিয় নেতা ছিলেন তিনি। তবে ২০১৯ সালের দিকে ছাত্রদলের কমিটিতে থাকা অবস্থায় তিনি ঢাকায় গিয়ে ছাত্রলীগ নেতা হওয়ার জন্য তদবির শুরু করেন। ছাত্রদল করার আগে শিবির করতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

 

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রাজশাহীর সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনুর সঙ্গে ছাত্রদল নেতাদের একটি ছবিতেও দেখা যায় তাঁর পাশেই রয়েছেন রানা। রাজশাহী কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মুর্ত্তজা ফামিন বলেন, রানা রাজশাহী কলেজ ছাত্রদলের নেতা। কলেজের মুসলিম হল শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। আমাদের সঙ্গে ছাত্রদলের মিছিল-মিটিং করতেন। ২০২০ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল সারাদেশের কলেজ ও হল কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণার আগেই লাপাত্তা হয়ে যান তিনি। হঠাৎ একদিন জানতে পারি, রানা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হয়েছেন। অথচ হল শাখার নেতা হিসেবে ছাত্রদলের অনেক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন তিনি।

রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রকি কুমার ঘোষ বলেন, সাকিবুল ইসলাম রানা আগে শিবির, পরে ছাত্রদল করত। সক্রিয় নেতা হিসেবে মিছিল-মিটিং করত। তার বিরুদ্ধে একবার সাইকেল চুরির অভিযোগও উঠেছিল নগরীর দরগাপাড়ায়। এসব অভিযোগের কারণে তাকে মুসলিম হল থেকে বের করে দিয়েছিলাম। এখন সেই রানাই জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি।

 

মাতলামি ও গণপিটুনি: গত ২৫ আগস্ট রাত আড়াইটায় নগরীর ঘোষপাড়ায় অস্ত্র হাতে মদ্যপ অবস্থায় মাতলামি করছিলেন জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সাকিবুল ইসলাম রানা ও যুগ্ম সম্পাদক হাসিবুল ইসলাম শান্ত। এলাকাবাসী তাঁদের থামাতে গেলে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকেন। পরে রানা, শান্তসহ তাঁদের সহযোগীদের পিটুনি দেন স্থানীয়রা। এ সময় তাঁরা নিজেদের দুটি মোটরসাইকেল ফেলে পালালে তা ভাঙচুর করেন স্থানীয়রা। পরে বোয়ালিয়া থানা পুলিশ বাইক দুটি জব্দ করে।

 

ভিডিও ভাইরাল, অডিও ফাঁস: সম্প্রতি এক নারীর সঙ্গে রানার অশ্নীল ভিডিও ভাইরাল হয়। হাতে শাঁখা পরা ওই নারীর পরিচয় জানা না গেলেও রানাকে পরিস্কার দেখা গেছে ভিডিওতে। এদিকে, রানার আরেকটি অডিও ফাঁস হয়। চার মিনিট ২৯ সেকেন্ডের ওই অডিওতে এক নারী ছাত্রলীগ নেত্রীকে বিছানায় আসার এবং আরেক নারীকে পাঠাতে বলেন রানা। এতে রানা বলেন, ‘তুমি আমার সাথে নাটক করিচ্ছো তাই না?’ মেয়েটি বলেন, ‘কিসের নাটক ভাইয়া?’ রানা- ‘তোমার কথা-কাজে মিল পাচ্ছি না। চিটারি করতে পারবা না। বহুত বড় চিটারি-বাটপারি কইরি আমি প্রেসিডেন্ট হইছি। সব চিটারের দলের সর্দার আমি। তুমি না হয়, আসতে চায়া আসলে না, কাকে যে পাঠাতে চাইলে সে কই? একজনের সাথে কইরি তুমি যদি বড় নেত্রী হও, সেটা মানুষ মাইনি লিতে পারে না, তুমি বুঝ না?’ মেয়েটি জানান, ‘এগুলো তো ভাইয়া অবান্তর কথা, আর আমার ফাইন্যান্সিয়াল সাপোর্ট দরকার নাই। আমি যথেষ্ট ভালো আছি। সংগঠনটাকে ভালোবেসেই আসছিলাম।’ রানা- ‘তাহলে শোন ঠিক আছে আর শান্ত-মান্তর কোনো বেল নাই।’ মেয়েটি- ‘তো ভাইয়া আপনি মেয়ের কথা কালকে বলছিলেন, তো আমি ছবি পাঠাইছিলাম।’ রানা- ‘দেখ দেখ পাঠাতে পারো নাকি?’ মেয়েটি- ‘উনিও তো ফ্যামিলির সঙ্গে থাকে।’ রানা- ‘এখন আটটা বাজে। কী এমন রাত? দেখ দেখ ফোন দাও। পাঠাও। কেউ যেন না জানে।’ মেয়েটি- ‘কে জানবে, আপনি আমাকে ভরসা করতে পারেন।’

 

ছাত্রলীগ সভাপতি রানার বক্তব্য

এসব বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সাকিবুল ইসলাম রানা বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমাদের ভেতরের কেউই ষড়যন্ত্র করছে। জয় ভাই ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে আমার খুবই ভালো সম্পর্ক। জয় ভাইয়ের মা শুধু আমাকে নয়, সারাদেশের নেতাকর্মীদেরই ভালোবাসেন। আমি জয় ভাইকে মেইনটেন করতাম। তিনি যখন সভাপতি হননি, নেতা ছিলেন না, তখনই তাঁর সঙ্গে আমার খুবই ভালো সম্পর্ক ছিল। জয় ভাই আমাকে অনেক স্নেহ করেন। ভাই ছাড়াও অনেকের সুপারিশ ছিল আমাকে সভাপতি করার জন্য।’

 

ছাত্রদলের কমিটিতে থাকা এবং মিজানুর রহমান মিনুর সঙ্গে ছবিতে থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার ছবি এবং নাম এডিট করে কেটে লাগিয়েছে। এটা ষড়যন্ত্র। ছবি দেখেন গলাকাটা। কমিটি দেখেন আমাকে ৬ নম্বরের পরে লাগাইছে।’ অশ্নীল ভিডিও ভাইরালের বিষয়ে বলেন, ‘সেটা আমি না। আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার।’ অডিও ভাইরালের বিষয়ে রানা বলেন, ‘সংগঠনে নেতাকর্মী বাড়াতে কাউকে উৎসাহ দিতেই পারি, তাই না? খারাপ কিছু তো বলিনি। অডিওটা দেন তো শুনি?’ পরে তাঁকে হোয়াটসঅ্যাপে অডিও দেওয়ার পর তিনি আর এ প্রতিবেদকের ফোন ধরেননি।

 

মাদক সেবন ও নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে। রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন অমির বিরুদ্ধে মাদক সেবনের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। রাজশাহী মেডিকেল কলেজের এই শিক্ষার্থী নিজের হোস্টেলকেই বেছে নিয়েছেন মাদক সেবনের আখড়া হিসেবে। এ প্রতিবেদকের কাছে এসেছে তাঁর ফেনসিডিল সেবনের একটি ভিডিও ক্লিপ। শুধু তাই নয়, তিনি প্রায়ই মানুষকে ধরে মারধর ও নির্যাতন করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গত ৩ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিমানবন্দরে প্রকাশ্যে আমিনুল ইসলাম সবুজ নামের ছাত্রলীগের এক কর্মীকে পেটান অমি। জানা গেছে, ফেসবুকে একটি পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁকে মারধর করেন তিনি। বাগমারা উপজেলা ছাত্রলীগের নেতৃত্বপ্রত্যাশী সবুজ বলেন, বাগমারার এমপি এনামুল হককে রিসিভ করতে রাজশাহী বিমানবন্দরে গেলে আমাকে মারধর করেন অমি। এতে কানে ও নাকে মুখে প্রচণ্ড আঘাত পাই।

 

এর আগে গত ২৬ জুলাই রাজশাহী মেডিকেলের নুরুন্নবী হোস্টেলে এনে মিলন হোসেন নামের এক এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতন করেন অমি। মিলনকে অমির পিএ বানানোর কথা বলে পুঠিয়ার শিবপুর থেকে আনা হয়েছিল। পরে মাদক সেবনসহ খারাপ পরিবেশ দেখে মিলন কাজ করতে অস্বীকৃতি জানান। এরপরই নির্যাতন শুরু হয়। এ ঘটনায় মিলনের বাবা আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে পুঠিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ করেছিলেন অমির বিরুদ্ধে।

 

এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন অমি বলেন, ‘সবুজ সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বেয়াদবি করেছিল। তাই একটি থাপ্পড় দিয়ে শাসন করেছিলাম। ফেনসিডিল খাওয়ার বিষয়টি কখনোই সত্য নয়। কেউ ভিডিও দেখালে সেটা এডিট করা বলে ধরে নেবেন। মিলন হোস্টেলে চুরি করেছিল। আমি তাকে উদ্ধার করেছি। আমার প্রতিপক্ষ অপপ্রচার করেছে।’

 

এসব বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে একাধিকবার ফোন করলেও তাঁরা ফোন ধরেননি। সুত্র: ইনকিলাব 

সংবাদটি শেয়ার করুন


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর

Recent Comments

No comments to show.