বিডি নিউজ২৩, আন্ডেতর্জাতিক ডেস্ক- ফাতেমা একজন সাহসী সাংবাদিক। ভয় আর হুমকি ধামকি সাথে নিয়ে চলেছেন প্রতিনিয়ত। তিনি সব সময় চাইতেন তার মৃত্যু যেন ভাঙ্গা বিল্ডিং এর ইটের গুড়ার নিচে পড়ে চাপা পড়ে না যায়। তার চাওয়াটাই আজ পূরণ হলো। পুরো বিশ্বের প্রতিটি মিডিয়ায় তাকে নিয়ে লেখালেখি করা হচ্ছে।
‘যদি আমি মারা যাই, আমি একটি সরব মৃত্যু চাই’ সামাজিক মাধ্যমে লিখেছিলেন ফাতেমা। তিনি লেখেন, ‘আমি শুধু ব্রেকিং নিউজ বা একটি দলের সংখ্যা হতে চাই না, আমি এমন মৃত্যু চাই, যা বিশ্ব শুনবে; এমন প্রভাব রাখবে, যা সময়ের সঙ্গে হারিয়ে যাবে না; এমন একটি কালজয়ী ছবি হবে, যা কখনো কেউ বিস্মৃত হবে না।
গত বুধবার বিয়ের কয়েক দিন আগে, ২৫ বছর বয়সী ফাতেমা হাসসুনা উত্তর গাজায় নিজ বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হন। তাঁর অন্তঃসত্ত্বা বোনসহ পরিবারের আরও দশজন সদস্যও নিহত হয়েছেন।
গাজার তরুণ ফটো সাংবাদিক ফাতেমা হাসসুনা জানতেন, মৃত্যু সব সময় তাঁর দরজায় ওত পেতে থাকে। গত ১৮ মাস ইসরায়েলের নির্বিচার বিমান হামলা, নিজের বাড়ি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া, বিপুলসংখ্যক মানুষের বাস্তুচ্যুতি এবং পরিবারের ১১ জন সদস্যের মৃত্যু নিজ হাতে নথিভুক্ত করেছেন তিনি। এসব ঘটনা ক্যামেরাবন্দী করতে গিয়ে তাঁর একটাই চাওয়া ছিল যেন নীরবে চলে যেতে না হয়!
ফাতেমা মৃত্যুর আগে খবর পেয়েছিলেন, গাজায় ফাতেমার জীবন নিয়ে নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র কান চলচ্চিত্র উৎসবের সময় একটি ফরাসি স্বাধীন চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হবে। ইরানি পরিচালক সেপিদেহ ফার্সি নির্মাণ করেছেন এই চলচ্চিত্র। ‘পুট ইওর সোল অন ইওর হ্যান্ড অ্যান্ড ওয়াক’ নামের এই চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে ফাতেমা ও ফার্সির মধ্যে ভিডিও কথোপকথনের মাধ্যমে গাজার দুর্দশা এবং ফিলিস্তিনিদের দৈনন্দিন জীবনের গল্প বলার ওপর ভিত্তি করে। ফার্সি বর্ণনা করেছেন, ফাতেমা হয়ে উঠেছিলেন ‘গাজায় আমার চোখ তেজি এবং প্রাণবন্ত। আমি তার হাসি, তার কান্না, তার আশা এবং তার বিষণ্নতা ধারণ করেছি।
নির্মাতা ফার্সি সংবাদমাধ্যম ডেডলাইনকে বলেন, ‘সে ছিল এক উজ্জ্বল জ্যোতি, এত প্রতিভাবান! যখন আপনি ছবিটি দেখবেন, তখন বুঝতে পারবেন…। আমি কয়েক ঘণ্টা আগে তার সঙ্গে কথা বলেছিলাম, তাঁকে জানিয়েছিলাম যে ছবিটি কানে যাচ্ছে। তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই ফাতেমার জীবন নিয়ে ভয়ে ছিলেন ফার্সি।
ফ্রান্সে নির্বাসিত ইরানি নির্মাতা ফার্সি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ফাতেমাকে সম্ভবত তাঁর বহুল প্রচারিত ফটোসাংবাদিকতার কাজ এবং সম্প্রতি প্রচারিত প্রামাণ্যচিত্রে অংশগ্রহণের জন্য লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল।
সাম্প্রতিক ইতিহাসে সাংবাদিকদের জন্য গাজা সবচেয়ে মারাত্মক সংঘাতের ক্ষেত্র, ২০২৩ সাল থেকে ১৭০ জনেরও বেশি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। অনেকে বলেছেন, এই সংখ্যা ২০৬।
যদি আমি মারা যাই, আমি একটি সরব মৃত্যু চাই- সাংবাদিক ফাতেমা