রাজশাহীর বাগমারায় এনটিভির সাংবাদিকের উপর ডাকাতির মিথ্যে মামলা, আড়াই বছর ভোগান্তির পর, হলেন বেকসুর খালাস
বিডি নিউজ২৩: রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার যোগীপাড়া ইউনিয়নের এক গ্ৰামে প্রতিবেশীর বাড়িতে টাকা লুটের অভিযোগে ঢাকায় কর্মরত এনটিভির সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট মিজান রহমানের বিরুদ্ধে হওয়া মামলায় মূল অভিযুক্ত এই সাংবাদিকসহ বাকী ১৫ আসামিকে খালাস দিয়েছেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট উজ্জ্বল মাহমুদের আদালত। দীর্ঘ আড়াই বছর হয়রানিমূলক এই মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষে গত ২৩ মে মঙ্গলবার আসামিদের খালাস দিয়ে রায় দেন আদালত।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক জানিয়েছেন, ২০২০ সালের অক্টোবরে পিতার মৃত্যুর পর জোর করে বসতবাড়ি ও জমিজমা দখলে ব্যর্থ হয়ে একই গ্রামের অধিবাসী বিভাগীয় কমিশনার অফিসের সাবেক কেরানী মোঃ ওমর আলী, সাবেক সেনাসদস্য আব্দুল মজিদ ওরফে বাবলু, স্থানীয় ইউপির হবু মেম্বারের পরামর্শে মিজান রহমানকে প্রধান আসামি করে তার ১৫ আত্মীয় স্বজনদের বিরুদ্ধে রাজশাহীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মিথ্যা মামলাটি দায়ের করেন উপজেলার যোগীপাড়া ইউনিয়নের ডোখলপাড়ার মুনসুর রহমানের স্ত্রী সায়েরা বানু। এজাহারে আসামির বিরুদ্ধে বাদীর বাড়ি থেকে জোর করে ৪ লাখ ৯ হাজার টাকা লুটের অভিযোগ আনা হয়। যোগীপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন এস আই আব্দুর রহিমকে মামলা তদন্ত ভার দিলে এলাকার এই প্রভাবশালী মহলের যোগশাযোশে ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করে পুলিশ। অভিযোগপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে বাদীর এজাহারে দাবি করা টাকার অংকের সাথে প্রাথমিক তদন্ত ও সাক্ষীর জবানবন্দিতে দেয়া টাকার পরিমানের কোন মিল নেই।
মামলা থেকে খালাস পেয়ে এই সাংবাদিক জানান বাদীর দাবীকৃত ঘটনা সংগঠিত হওয়ার সময় ২৪ ডিসেম্বর ২০২০ ইং তারিখ বৃহস্পতিবার তিনি ঢাকা কারওয়ানবাজারে এনটিভি অফিসে নাইট শিফটে ডিউটিরত ছিলেন। এনটিভিতে কর্মীদের হাজিরা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে আঙ্গুলের ছাপের সময়সূচি অনুযায়ী মিজান রহমান অফিসে আসেন ২৪ ডিসেম্বর ২০২০ বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১ টায় আর অফিস শেষে বের হন শুক্রবার সকাল আটটা ৫৩ মিনিট ১৫ সেকেন্ডে। আর মামলার এজাহারে টাকা লুটের ঘটনার সময় উল্লেখ করা হয়েছে একই তারিখ রাত একটা থেকে দেড়টার দিকে। অফিস হাজিরার নথিপত্রসহ উক্ত দিন ও সময়ে এনটিভিতে কর্মরত বার্তা সম্পাদকের সাফাই সাক্ষী গ্ৰহন ও বাদী পক্ষের ছয় সাক্ষীর জবানবন্দি গ্ৰহন করেন আদালত। পরে যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের দিন ধার্য করা হয়। রায়ের দিন বিচারক পুরো বিচারিক কার্যক্রম ও সাক্ষীদের জেরা সব আসামি ও বাদীর সামনে উপস্থাপন করেন। পরে আসামিদের প্রায় ঘন্টাব্যাপী জেরা করেন বিচারক নিজে।। আদালতে দাখিল করা বিভিন্ন নথিপত্র ও আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক পর্যালোচনা করে মামলাটিকে মিথ্যা ও বানোয়াট উল্লেখ করে সব আসামিদের খালাস দিয়ে রায় দেন। মিথ্যা মামলা দায়ের করার অপরাধে বাদীকে জেলে প্রেরনের কথা বললেও নারী হিসেবে ক্ষমা করে দেন আদালত।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ০৫ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে একই গ্ৰামের অধিবাসী বিভাগীয় কমিশনার অফিসের সাবেক কেরানী ওমর আলী, সাবেক সেনা সদস্য আব্দুল মজিদ ওরফে বাবলু, হবু মেম্বারের প্রতক্ষ্য মদদে এই সাংবাদিকের বসত বাড়ি ও জমিজমা দখল করতে যায় মামলার বাদীর স্বামী মুনসুর ও ছেলে রুবেল হোসেন সহ ২০/২৫ জন সন্ত্রাসী। তারা জোর করে শতাধিক বাঁশ কাটে ও বাড়ির মহিলাদের মারধর করে। দুই দফা গ্ৰাম্য সালিশ করেও হামলা নির্যাতনের বিচার না পেলে এই ঘটনায় মিজানের ছোট ভাই আহসান হাবীব বাগমারা থানায় মামলা দায়ের করেন। (মামলা নং-২৩ তারিখ: ২৪-১২-২০২০ ) ২৪ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে গ্ৰামে অভিযান চালিয়ে বাড়িতে হামলার ঘটনায় জড়িত মূল আসামি রুবেল, মুনসুর, আব্দুল মজিদ ওরফে বাবলু ও আবুল কালাম আজাদকে গ্ৰেফতার করে আদালতে পাঠায় বাগমারা থানা পুলিশ। পাল্টা মামলা হিসেবে মিজান রহমানকে প্রধান আসামি করে মোট ১৬ জনের বিরুদ্ধে ০২ জানুয়ারি ২০২১ সালে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বাদীকে দিয়ে মিথ্যা মামলাটি দায়ের করান মামলাবাজ এই চক্র । উল্লেখ্য মামলার বাদী সায়েরা বানুর স্বামী মুনসুর রহমান এই সাংবাদিকের ছোট ভাইয়ের করা জমিজমা সংক্রান্ত অপর এক প্রতারনা মামলায় আদালত কর্তৃক ছয় মাসের জেল ও ৫ হাজার টাকা জরিমানার দন্ড পেয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছে।
সংযুক্তি:১. মিজানের বিরুদ্ধে মামলার এজাহার ২. পুলিশের অভিযোগপত্র ৩. এনটিভির অফিস হাজিরার ফিঙ্গারপ্রিন্ট নথি ৪. এনটিভির বার্তা প্রধানের প্রত্যয়নপত্র ৪. সাফাই সাক্ষী হিসেবে ওই দিন সময়ে এনটিভিতে কর্মরত বার্তা সম্পাদক মুজতবা খন্দকারের জবানবন্দি, ৪. হামলা ও বাড়ি দখলের অভিযোগে মিজানের ছোট ভাইয়ের করা মামলা ও ৫. অভিযোগপত্র
৫. ঘটনার সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ।
