পুঠিয়ায় খবর প্রকাশের পর নতুন পাকা রাস্তাটি ইট-বালু ছাড়াই, শুধু মাটি দিয়ে মেরামত করেন তারা।
বিডি নিউজ২৩, ডেস্ক: রাজশাহীর পুঠিয়ায় বেশ কিছু রাস্তার নির্মাণ কাজে কতৃপক্ষের চড়ম গাফিলতি আর নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সংস্কার কাজ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এলজিইডির তৈরিকৃত ১৫ দিনেই ভেঙ্গে যাওয়া রাস্তাটি নিয়ে বিডি নিউজ২৩ সহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশের পর রাস্তাটি ঠিক না করে তড়িঘড়ি করে শুধু মাটি দিয়ে ঢেকে দিয়েছে ভাঙ্গা স্থান। এ যেন শাক দিয়ে মাছ ঢাকা অবস্থা, এ নিয়ে ওই এলাকার মানুষের মাঝে দেখা যায় চরম ক্ষোভ।
রাস্তা তৈরীর মাত্র ১৫ দিনের মাথায় ভেঙ্গে যায় ওই সকল রাস্তা। পরে কর্তৃপক্ষ ভাঙ্গা স্থানগুলো ইট পাথর দিয়ে মেরামত না করে তার উপর মাটি ঢেলে এক প্রকার দায় সারেন।
ওই সকল এলাকার বহু মানুষ মনে করছেন, তদারকি ও নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে রাস্তার সংস্কার কাজ করায় এসব রাস্তার স্থায়িত্ব খুবই কম। যার ফলে মাত্র দুদিনের সামান্য বৃষ্টিপাতেই ভেঙ্গে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে সেসব রাস্তা। এসব রাস্তার কোনোটির বয়স মাত্র দুসপ্তাহ আবার কোনোটির বয়স মাত্র ৩ মাস। অনেকে মনে করেন এমন গাফিলতি আর নিম্নমানের কাজের রাস্তা এর আগে তারা দেখে নি। ওইসব রাস্তা নিয়ে এলাকাবাসীর অভিযোগের যেনো অন্ত নেই। এমন কাজে উপজেলা প্রকৌশলীর প্রতি একের পর এক ব্যক্তি করছেন নানান রকম মন্তব্য।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সম্প্রতি কুরবানীর ঈদের এক সপ্তাহ পর, প্রায় ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে সংস্কার করা হয়েছে প্রায় অর্ধ কিলোমিটার রাস্তা। সেই রাস্তাটি দু সপ্তাহ না যেতেই ভেঙ্গে ও কার্পেটিং এর পাথর ওঠে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। তেমনি একটি রাস্তা শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের সাধনপুর বাজার সরদার পাড়া জামে মসজিদ হতে বিদির পুর মধ্য পাড়া জামে মসজিদ পর্যন্ত। ওই রাস্তাটি কয়েক জায়গায় ইতিমধ্যে ভেঙ্গে গেছে। রাস্তার মুল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নাম মেসার্স এম.এম ট্রেডার্স। পরে হাসিব নামের আরেক ব্যক্তি কিনে নিয়ে ওই কাজ করেন। পাশাপাশি কোথাও কোথাও রাস্তার ভাঙ্গন রোধে দেওয়া হয়েছে প্রটেকশন ওয়াল। কিন্তু কাজে আসছে না সেটাও। এ যেনো সরকারি মাল, নদীতে ঢাল অবস্থা।
এছাড়াও একই উপজেলার ভালুকগাছি ইউনিয়নের নওপাড়া বাজারের গ্রামীণফোনের টাওয়ারের নিকট হতে দাসমাড়িয়ার রাস্তা তৈরি করা হয়েছে রোজার ঈদের ২দিন আগে তাড়াহুড়া করে। সেখানেও বরাদ্দ হয় প্রায় ২৪ লাখ টাকা। রাস্তাটি ছিল প্রায় ৩০০ মিটার সেটিরও ভাঙ্গন শুরু হয়ে গেছে। ৩০০ মিটার ওই কাজটি করেছেন নাটোরের শুভ নামের আরেক ঠিকাদার।
ইদানিং লক্ষ্য করা গেছে পুঠিয়া উপজেলায় রাস্তার সংস্কার কার্পেটিং নির্মাণ কাজ সহ অন্যান্য কাজের বড় একটা অংশ নাটোরের শুভ নামের ঠিকাদারকে করতে দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে বারবার এমন নিম্নমানের কাজ করেও বহাল তবিয়তে থাকছেন শুভ, হাসিবরা।
এসব বিষয়ে খোঁজখবর নিতে সরেজমিনে ওইসব এলাকায় গেলে পুঠিয়া উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় এর উপর ব্যাপক ক্ষোভ ঝাড়েন স্থানীয়রা। ওই এলাকার বহু মানুষ বলছেন দুদিনের বৃষ্টিতে অন্য রাস্তাগুলো নষ্ট হল না, তাহলে কেন এই রাস্তা নষ্ট হলো। এভাবে সরকারের এতগুলো টাকা নষ্ট করার মানেটা কি। যদিও তাদের এসব প্রশ্নের উত্তর থাকলেও তা কেবলই অজানা। ওই এলাকার মানুষেরা চাইছেন রাস্তা গুলো আবারো টেকসই করে তৈরি করে দেওয়া হোক।
এ বিষয়ে স্থানীয় রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, গতকাল ভাঙ্গা জায়গাগুলোতে মাটি দিয়ে ঢেকে দিয়ে গেছে। এই রাস্তাটি এমনভাবে নষ্ট হয়েছে যা পুনরায় সব উপড়ে ফেলে দিয়ে নতুন ভাবে না করলে আর কোনভাবেই টিকবে না।
নাসিম রায়হান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, কাজ শেষ না হতেই রাস্তা দেবে গিয়েছিল। তাদেরকে বলেছিলাম তারা ঠিক করে নি। আর আপনারা আশার পরের দিন রাস্তার লোকজন এসে শুধু মাটি দিয়ে সব ভাঙ্গা স্থান ঢেকে দিয়েছে। রাস্তার এমন দুর্দশার বিষয়ে এলাকার সাজিদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি বলেন, রাস্তা তৈরি করার সময় আমরা বুঝতে পারছিলাম রাস্তাটির কাজ ভালো হচ্ছিল না এসব নিয়ে আমরা প্রতিবাদও করেছিলাম কিন্তু তারা কেউ শোনেনি। কাজের বিষয়ে ঠিকাদার হাসিব বলেন, বৃষ্টির কারণে রাস্তা ভেঙ্গে গেছে, ঠিক করে দেওয়া হবে কোনো সমস্যা নাই। এবিষয়ে পুঠিয়া উপজেলা প্রকৌশলী পারভেজ নেওয়াজ খান বলেন। রাস্তার বিল এখনো পরিশোধ করা হয়নি। সম্পুর্ন রাস্তার কাজ বুঝে নিয়ে তার পর বিল পরিশোধ করা হবে।

রাজশাহীর পুঠিয়ায় খবর প্রকাশের পর নতুন পাকা রাস্তা মাটি দিয়ে মেরামত!