পুঠিয়া (রাজশাহী) প্রতিনিধি:
রাজশাহীর পুঠিয়ায় এক বীর মুক্তিযোদ্ধার বাসায় ঢুকে তার বৃদ্ধ স্ত্রীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে লুটপাট করার অভিযোগ উঠেছে।
রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত আনুমানিক ২ টার দিকে ওই ঘটনা ঘটে। সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
সরেজমিনে গিয়ে ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউপির খোকসা গ্রামের মৃত, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ এর বাসায় ওই ঘটনা ঘটে। চাকরির সুবাদে বাড়ির অন্যান্য সদস্যরা না থাকায় মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ এর স্ত্রী তিনি একাই বাসায় থাকতেন। এই সুযোগে দুর্বৃত্তরা রাতের আঁধারে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে তাকে জিম্মি করে দুর্বৃত্তদের অন্যান্য সদস্যরা ঘরের তালা ভেঙ্গে ও দরজার হাতল কেটে ঘরে প্রবেশ করে জিনিসপাতি লুট করে নিয়ে যায়। এ বিষয়ে পুঠিয়ার থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ এর ছেলে জিল্লুর রহমান। ঘটনার পর সোমবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পুঠিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইদুর রহমান ও রাজিবুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পুঠিয়া (সার্কেল) পুঠিয়ার, রাজশাহী।
এবিষয়ে মামুনুর রশিদ নামের এক প্রতিবেশী বলেন, সকালে বিষয়টি শুনতে পাই। অনেক মানুষ সেখানে ভিড় জমিয়ে বিষয়টি দেখছিল।
এবিষয়ে ভুক্তভোগী ও স্থানীয় একটি কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক জিল্লুর রহমান বলেন, আমাদের পরিবারে প্রায় সবাই চাকরিজীবী তাই চাকরির সুবাদে খুব বেশি বাসায় থাকা হয় না। মা একাই বাসায় থাকেন। রাত তিনটার সময় আমার কাছে খবর আসে এই ঘটনার। পরে সকালে এসে দেখি আমার বাড়ি তছনছ করে ফেলা হয়েছে। প্রায় সোয়া ৩ লাখ টাকা এবং ৪ ভরি বা তার কিছু কম বেশি স্বর্ণ গহনা নিয়ে গেছে। এসব বিষয় নিয়ে থানায় একটি অভিযোগ করেছি দেখি তারা কি করে।
ভুক্তভোগী ওই পরিবারের আরেক ছেলে শহীদুল ইসলাম তিনি বলেন, মূলত মা এখানে একাই থাকেন। আমরা মাঝেসাজে এখানে আসি। আমার আরেক ভাই জিল্লুর রহমান সে এখানে থাকে কিন্তু চাকরি করার সুবাদে মাঝেমধ্যে অন্য জায়গায় থাকতে হয়। বিষয়টি আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার বাসায় এই ধরনের ঘটনা আসলে লজ্জা জনক বিষয়। আরো লজ্জা জনক বিষয় হচ্ছে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার বৃদ্ধ স্ত্রীকে গলায় ছুরি অস্ত্র ঠেকিয়ে বাড়ি লুট করা। প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি বিষয়টি তদন্ত করে সঠিক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অস্ত্রের মুখে জিম্মি থাকা শাহেরা বেওয়া ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলেন, আমি প্রতিদিনের ন্যায় রাত দুইটার সময় তাহাজ্জুতের নামাজ পড়ার জন্য উঠেছি। বাড়ির ভেতরে খুটখাট শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। আমি মনে করেছি অন্য কিছুর শব্দ। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনজন লোক আমার গলায় ছুরি ধরে আমাকে বলতে থাকে চিল্লাচিল্লি করলে আমাকে মেরে ফেলবে। প্রায় আধাঘণ্টার মতো সময় তারা আরো বাহিরে কয়েকজন ছিল এটা ওটা ভাঙছে তার শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। ওরা চলে যাবার পর আমি কষ্ট করে পাশের বাড়িতে গিয়ে বিষয়টা বলি তখন তারা এসে সেখানে কাউকে আর পায়নি। আমি বর্তমানে খুব ভীত হয়ে আছি। তারা আবার এসে আমাকে মেরে ফেলে কিনা এই ভয়েও আছি।
ওই ঘটনায় স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল মালেক তিনি বলেন বিষয়টি আমি শুনেছি এবং সকালে গিয়ে দেখে এসেছি। আসলেই চোরের ছিনতাই হচ্ছে সেদিকে প্রশাসনের নজর দেওয়া উচিত।
এ বিষয়ে পুঠিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইদুর রহমান তিনি বলেন, চুরির একটা ঘটনা শুনতে পেয়ে আমরা থানা থেকে তদন্ত করতে এসেছি। আমার ঊর্ধ্বতন মহল তারাও এসেছেন বিষয়টি তদন্ত করে জরুরিভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একজন গ্রেফতার ও হয়েছে। বাকি গুলোকে ধরার চেষ্টা চলছে।