বিডি নিউজ২৩; নতুন বছরের প্রথম দিনে সব শিক্ষার্থীদের মতো ছোট্ট রাজিফা নতুন বই নিতে গিয়েছিল তার অধ্যয়নরত বিদ্যালয়ে। কিন্তু হতাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে তাকে। সেশন ফি ও ফরম ফিলাপের টাকা না দেওয়ায় নতুন বই দেওয়া হয়নি রাজিফাকে। বই না পেয়ে কান্না করতে করতে মায়ের কাছে অভিযোগ করে।।
এমনই ঘটনা ঘটেছে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার রাইগা উচ্চ বিদ্যালয়ে। অভিযোগ ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম শাহ সেশন ফি ও ফরম ফিলাপের টাকা না দেওয়ার অজুহাতে শিক্ষার্থীদের নতুন বই দেননি।
অথচ বছরের প্রথম দিনে সব শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে নতুন বই দেওয়ার প্রতিশ্রুতি সরকারের। সেখানে সেশন ফি বা ফরম ফিলাপের টাকা জমা ছাড়া বই না দেওয়ার ঘটনায় চলছে সমালোচনা। ক্ষুব্ধ হয়েছেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, সারা দেশের ন্যায় জেলা মহাদেবপুর উপজেলার রাইগা উচ্চ বিদ্যালয়ে পহেলা জানুয়ারি বই বিতরণের সময় টাকা নেওয়ার অভিযোগ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। এমপিওভুক্ত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ১৯৩০ সালে কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে বিভিন্ন শ্রেণিতে প্রায় ১১০০ শিক্ষার্থী শিক্ষা গ্রহণ করছে। শ্রেণি অনুযায়ী, বছরের প্রথম দিনে প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছে থেকে ৫০০-৭৫০ টাকা নেওয়ার অভিযোগ করেন তারা। যারা দিতে পারে নি তাদের বই না দেওয়ার অভিযোগ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।
মহাদেবপুর উপজেলার রাইগা ইউনিয়নের মাতাজী হাট এলাকায় দিনমজুর মাকে নিয়ে বসবাস করেন রাইগা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোছা. রাজিফা আখতার। তার মা শাহিদা আক্তার খাবার হোটেলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করে মেয়েকে উচ্চ শিক্ষিত করার চেষ্টায় আছে।
রাজিফা জানায়, শিক্ষকরা তাকে সেশন ফি-র টাকা ছাড়া এ বছরের নতুন বই দেয় নি। মাকে নিয়ে দ্বিতীয় দিনের মতো ২ জানুয়ারি স্কুলে গিয়ে টাকা দিতে না পারায় তাকে নতুন বই দেওয়া হয় নি। মাকে নিয়ে শিক্ষকদের এ ঘরে ওই ঘরে গিয়েও কোন লাভ হয় নি।
তার মা শাহিদা আক্তার জানায়, বছরের প্রথম দিন শেখ হাসিনা বিনামূল্যে সকল শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ করার ঘোষণা দিয়েছেন। সেখানে আমার মেয়ে টাকা না দিতে পারায় বছরের প্রথম দিন বই না পেয়ে কান্না করতে করতে বাড়িতে আসে। বছরের প্রথম দিন সেশন ফি-র টাকা না দেওয়ায় মেয়েকে বই না দেওয়াটা তিনি অন্যায় মনে করেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম শাহ শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করলেও এর সদউত্তর দিতে পারেন নি। অপরদিকে বিদ্যালয়টির সভাপতি অসিত চন্দ্র ঘটনাটির সঠিক তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান।
অভিভাবক, শিক্ষার্থী এবং এলাকাবাসি ঘটনাটি জানা জানি হলে স্কুলে এসে এসে জমায়েত হন এবং প্রধান শিক্ষকের কাছের এর কৌফিয়ত চান । উত্তেজিত জনতা স্কুল কর্তৃপক্ষের প্রতি তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানান।
ঘটনাটি সত্য বলে শিক্ষার্থীরা জানান, টাকা ছাড়া তাদের নতুন বই দেওয়া হয় নি । তাই তারা বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে এসে বিদ্যালয়টি থেকে নতুন বই সংগ্রহ করেন।
এ বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে নওগাঁ জেলা শিক্ষা অফিসার লুৎফর রহমান মুঠোফোনে বলেন, এ ধরনের ঘটনা শোনার পর আমি সেই বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়েছি। সকলকে বই দেওয়া হয়েছে বলে আমাকে জানানো হয়েছে। আর কেউ টাকা ছাড়া বই না পেয়ে থাকলে করণীয় কি এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিন্যামূল্যের বই বিন্যামূল্যেই দিতে হবে। বই বিতরণের জন্য টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এছাড়া সেশন ফি এবং ফরম ফিলাপ এর সাথে বই বিতরণ এর কোন সম্পর্ক নেই । সরকার নির্ধারিত রেটে সেশন ফি এবং ফরম ফিলাপ এর নিয়ম আছে তবে বইকে কেন্দ্র করে নয়। যদি প্রধান শিক্ষক নতুন বই বিতরণের সময় সেশন ফি এবং ফরম ফিলাপ এর টাকা না পেয়ে শিক্ষার্থীদের বই না দেয়, তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
বছরে প্রথম দিনে রাজিফার মতো আরও শিক্ষার্থীরা টাকা ছাড়া নতুন বই পায়নি। বিষয়টি অমানবিক এবং গুরুতর অন্যায় বলে মনে করছেন ভুক্তভোগীরা।