বিডি নিউজ২৩: নরসিংদীর মাধবদীতে মাদ্রাসার শৌচাগারে মাইশা আক্তার (১০) নামে এক ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে সড়ক অবরোধ ও মানববন্ধন করা হয়েছে।
সোমবার দুপুরে মাধবদী থানার শেখেরচর বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন স্থানে মহাসড়কের দুপাশে এই মানববন্ধন করা হয়। ২ ঘণ্টাব্যাপী এই মানববন্ধনে মাইশার পরিবার, এলাকাবাসী ও সামাজিক সংগঠনের কর্মীসহ কয়েকশত মানুষ অংশ নেন।
এ সময় স্থানীয়রা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করলে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মহাসড়কের একপাশে দাঁড়িয়ে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করার আহ্বান জানালে তারা মহাসড়ক থেকে সরে যান।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, মাইশার পরিবার প্রথম থেকেই বলে আসছে, এটা আত্মহত্যা নয় পরিকল্পিত হত্যা। ১০ বছরের একটি শিশু প্রায় ৭ ফুট উঁচুতে ওড়না ও গামছা জোড়া দিয়ে কোনোভাবেই আত্মহত্যা করতে পারে না। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্নও পাওয়া গেছে। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে এখন আত্মহত্যা বলা হচ্ছে। দেড় মাস আগে ওই মাদ্রাসার আরেকটি শৌচাগার থেকে আরেক ছাত্রীর মরদেহ পাওয়া গিয়েছিল। পরপর এমন ঘটনা ঘটতে থাকায় ধারণা করা যাচ্ছে, মাদ্রাসাটির ভেতরে অবশ্যই কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে। মাদ্রাসাটি বন্ধ ঘোষণা করে পুলিশকে রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি জানিয়ে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার অনুরোধ জানান বিক্ষোভকারীরা।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন, শিশু মাইশার স্বজন মো. শাহাদাত হোসেন, মো. আলম মিয়া, মো. রোমান মিয়া, মো. বেলায়েত মেম্বার, মো. আল আমিন প্রধান। এ সময় ব্যানার-ফেস্টুন হাতে মানববন্ধনে অংশ নেয় মাধবদী ব্লাড ডোনার ক্লাব, সচেতন নাগরিক সমাজ (সনাক), ভগীরথপুর ওয়ান ক্লাব, যুব জাগরণ সংস্থা, অ্যাডভান্স এডুকেয়ার জুনিয়র স্কুল, কান্দাপাড়া সবুজ বাংলা ব্লাড ডোনার ক্লাব, মাধবদী কালচারাল ক্লাব, উই কেয়ার অর্গানাইজেশন, বাংলাদেশ বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড নামের বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীরা।
এ বিষয়ে মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রকিবুজ্জামান জানান, এই ঘটনায় ছাত্রী মাইশার বাবা নেছার উদ্দিন থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেছেন। এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। জড়িত যেসব ব্যক্তিদের নাম পুলিশি তদন্তে আসবে তাদের গ্রেফতার করা হবে।
জানা গেছে, গত ১ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শেখেরচরের কুড়েরপাড় এলাকার জামিয়া কওমিয়া মহিলা মাদ্রাসার শৌচাগার থেকে গলায় ফাঁস দেয়া অবস্থায় মাইশা আক্তারকে উদ্ধার করা হয়। পরে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তাকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এর দেড়মাস আগে ১৯ অক্টোবর দুপুরে পাঠদান চলাকালে একই কায়দায় মাদ্রাসাটির আরেকটি শৌচাগার থেকে আফরিন আক্তার (১৬) নামের আরেক ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
মাইশা আক্তার নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদী থানার ভগীরথপুর এলাকার ডাইংশ্রমিক নেছার উদ্দিনের মেয়ে। মাদ্রাসাটির একজন আবাসিক ছাত্রী হিসেবে থেকে মক্তব দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত সে। অন্যদিকে আফরিন আক্তার মাধবদীর দড়িগাজীরগাঁও এলাকার ডালিম মিয়ার মেয়ে ও মাদ্রাসাটির আলিম প্রথম বর্ষের (উচ্চমাধ্যমিক) শিক্ষার্থী ছিল।