বিডি নিউজ২৩; রাজশাহীর, পুঠিয়া উপজেলার, শীলমাড়িয়া ইউনিয়নের, খামার মারিয়া গ্রামে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক গ্রাম্য ডাক্তারের বিরুদ্ধে।
সোমবার (৭ ই নভেম্বর) ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর এই ঘটনাটি ঘটেছে।
জানা যায়, ডাক্তারের আছে ২ বছরের কোর্সের লাইসেন্স, সাথে ৭ দিনের কোর্স করা সার্টিফিকেট। উপজেলার খামার মাড়িয়া গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী, আকলিমা বেওয়া (৫৬) গত ৩ই নভেম্বর সকালে অসুস্থতা অনুভব করতে দেখে, হাড়োগাথি বাজারের গ্রাম্য ডাক্তার আব্দুল খালেকের কাছে শরণাপন্ন হলে বাসায় এসে তিনি চিকিৎসা দেয়। চিকিৎসা দেওয়া শুরু করার পর থেকেই আকলিমা বেওয়া আরো বেশি অসুস্থ হতে থাকে। এসময় মায়ের এমন পরিস্থিতি দেখে অসুস্থ আকলিমার মেঝো মেয়ে দোলেনা আক্তার রেশমা আবারো ডাক্তারের কাছে ফোন করে। এরপর ডাক্তার এসে আবারো আরেকটা ইনজেকশন দেয়। এরপর আকলিমা বেওয়া আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে আরও একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে রোগীকে দ্রুত পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায়। রোগীর অবস্থা খারাপ দেখে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রাজশাহীতে পাঠানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পরে রোগীর অবস্থার অবনতি দেখে আইসিইউতে নেয়া হয় পরে সেখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
এই বিষয়ে মৃত আকলিমা বেওয়ার মেঝো মেয়ে দোলেনা আক্তার রেশমা বলেন, গত বৃহস্পতিবার দিনে আমার মা অসুস্থতা অনুভব করেন, তখন পার্শ্ববর্তী হাড়োগাথি বাজারের খালেক ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে নিয়ে আসি। এসে আমার মা,কে স্যালাইন দেয় এবং তার ভেতর কিছু ইনজেকশন ঢুকিয়ে দেয়। এভাবে রেখে ডাক্তার চলে যাওয়ার পর আমার মায়ের হাত ফুলে যেতে থাকে, আর অসুস্থ অনুভব করতে থাকে। তখন তখন আমরা অবস্থা বেগতিক দেখে স্যালাইন খুলে দেই। পরে আমি আবারও খালেক ডাক্তারকে ফোন করে ডাকি, তখন ডাক্তার বলেন স্যালাইন আবার ঢুকিয়ে দাও। এভাবে কিছু সময় যাবার পর আমার মায়ের অবস্থা আরো বেশি খারাপ হতে থাকে তখন আমি ডাক্তারকে আবারো ফোন করি তখন ডাক্তার এসে স্যালাইন লাগিয়ে দিয়ে স্যালাইনের মধ্যে আরো কিছু ইনজেকশন ঢুকিয়ে দেয়। তখন আমার মা আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ ঘটনার সঠিক তদন্ত করে বিচার চাই।
ভুক্তভোগী আকলিমা বেওয়ার ছেলে আয়চাঁদ আলী বলেন, আমার মাকে ভুল চিকিৎসা দেওয়ার কারণে সেন্সলেস হয়ে যায়। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে সেখানকার ডাক্তাররা বলেন ভুল চিকিৎসার কারণে আমার মায়ের শরীরে ব্যাকটেরিয়া ঢুকে যায়। এ বিষয়ে আমি থানায় যোগাযোগ করেছি থানার অফিসার ইনচার্জ তিনি বলেছেন আপনারা ক্লাসটি দাফন করে ফেলুন এবং কোর্টে মামলা দিতে পারেন। কোর্টের আশ্রয় নেন। আমরা আইনের আশ্রয় নেব, আইনের আশ্রয় চাই। আর এই ঘটনার সঠিক তদন্ত করে সঠিক বিচার দাবি করছি।
আকলিমা বেওয়ার বড় মেয়ে মরিয়ম বেগম তিনি বলেন, আমার মা ডাক্তার খালেকের ভুল চিকিৎসার কারণে মারা গেছে। ওই ডাক্তারের কারণে আমরা ৪ ভাই-বোন এতিম হয়ে গেলাম। খালেক ডাক্তার এর সঠিক বিচার চাই।
উপজেলার একই এলাকার তুফান নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন এর আগে আমার স্ত্রীর শরীর জ্বালাপোড়া করত এই বিষয়ে খালেক ডাক্তার ভুল চিকিৎসা দিয়েছিল। দ্রুত ঘটনা বুঝতে পেরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে আমার স্ত্রীকে ভালো করে ফিরিয়ে আনতে পারি।
আরেকজন প্রতিবেশী তিনি বলেন, ডাক্তারি করার সার্টিফিকেট না থাকলেও, আমাদের পরিবারের সে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। কোন সমস্যা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গ্রাম্য ডাক্তার আব্দুল খালেক বলেন, আমাকে ডাকলে আমি সেখানে গিয়ে একটা স্যালাইন দিয়ে আসি। ভুল চিকিৎসায় মারা যায়নি। আমি অন্য কোন চিকিৎসা দেইনি। এই লাইনে আমার ২২ ২৩ বছর। এর আগে এমন কোন অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে নাই। এসব শুনে আমারও খারাপ লাগছে। রোগীটা যেহেতু দুইবার স্ট্রোক করা সেহেতু কোন সমস্যা হতেই পারে। আমার নাটোরে ২ বছরের কোর্সের লাইসেন্স আছে। এছাড়াও পুঠিয়ায় সাত দিনের একটি কোর্স করা আছে। এছাড়া লাইসেন্স নাই।
এ বিষয়ে শীলমাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন মুকুল বলেন, ওই এলাকায় কোনো ঘটনা ঘটলে আমাকে সচরাচর জানায়, তবে এই বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা।
এ বিষয়ে পুঠিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি সোহরাওয়ার্দী হোসেন বলেন, ভুল চিকিৎসার মারা যাওয়ার বিষয়ে থানায় কোনো অভিযোগ পাইনি। আর এই বিষয়ে অতো কিছু জানিনা।