বিডি নিউজ২৩: নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে সফুরা খাতুন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলে স্লোগান দেয়। গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় ক্লাস বর্জন করে প্রথমে নারায়ণগঞ্জ-আদমজী-চাষাড়া সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। পরে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাফিজুর রহমান ও পরিদর্শক (অপারেশন) হাবিবুর রহমানসহ সঙ্গীয় ফোর্স ঘটনাস্থলে
গিয়ে ছাত্রীদের বুঝিয়ে বিদ্যালয়ের ভেতরের মাঠে নিয়ে যায়। বেলা ২টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের মাঠেই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সেøাগান দিতে থাকে এবং তার অপসারণ দাবি করে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বিষয়টিকে ‘ষড়যন্ত্র’ বলে দাবি করছেন প্রধান শিক্ষক।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া কয়েজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলে, রফিক স্যার যখন ক্লাসে আসেন তখনই কৌশলে আমাদের শরীরে হাত দেন। আমরা শ্রেণিকক্ষে পড়া দিতে না পারলে তিনি আমাদের ছবি তার মোবাইলে তুলে নিয়ে যেতেন। আমরা চাই না আমাদের আর কোনো বোন তার দ্বারা হয়রানির শিকার হোক। তার মতো শিক্ষক আমরা এ বিদ্যালয়ে চাই না। আমরা তার পদত্যাগ চাই।
এ সময় শিক্ষার্থীরা নাসিক ৪, ৫, ৬ নং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগমের বিরুদ্ধেও অভিযোগ তোলে। তারা বলে, প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে আমরা আন্দোলন করলে তিনি নাকি আমাদের পরীক্ষা দিতে দেবেন না। তিনি একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে এমন কথা কীভাবে বলেন? তিনি আমাদের প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে বলেছেন প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো আন্দোলন আমরা যেন না করি।
এ বিষয়ে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগম আমাদের সময়কে বলেন, আমি একজন মা এবং ওই বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা আমার মেয়ের মতো। তাদের হুমকি দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমি ছাত্রীদের বিক্ষোভের কথা শুনে ঘটনাস্থলে যাই। তাদের অভিযোগ শুনে দুই দিন সময় চাই। যাতে করে বিষয়টি নিয়ে সকলের সঙ্গে কথা বলে সমাধান করা যায়। কিন্তু তারা আমার সেই কথা না রেখে রাস্তায় গিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। তখন আমি আর সেখানে না থেকে সিটি করপোরেশনে চলে এসে মাসিক সভায় যোগদান করি।
এদিকে সফুরা খাতুন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামের দাবি, তার বিরুদ্ধে ছাত্রীদের কেউ প্ররোচিত করে এ বিক্ষোভ করিয়েছে। তার বিরুদ্ধে ছাত্রীদের করা অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। একটি পক্ষ তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তিনি বলেন, ‘এসব ছাত্রী কোমলমতি। তারা এখনো ষড়যন্ত্র কী তা বোঝে না। তাদের ভুল বুঝিয়ে মিথ্যা বলানো হচ্ছে।’
সফুরা খাতুন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা এবং সর্বশেষ গঠিত এডহক কমিটির সভাপতি সফর আলী ভূইয়া বলেন, ছাত্রীদের আন্দোলনের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে অন্য শিক্ষকদের দ্বন্দ্ব চলতেছে। ছাত্রীদের ম্যানেজ করে হয়তো এ কাজ করানো হচ্ছে। তারপরেও আমি মঙ্গলবার গিয়ে ছাত্রীদের অভিভাবকদের ডাকাব। ছাত্রীরাও থাকবে, প্রধান শিক্ষকও থাকবেন এবং সংশ্লিষ্ট সবাই থাকবে। তারপর দেখব কার দোষ। প্রধান শিক্ষকের দোষ প্রমাণ হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে আন্দোলনের খবর পেয়ে বেলা ২টায় বিদ্যালয়ে এসে উপস্থিত হন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু তালেব। তিনি বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষিকা এবং এডহক কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত বিষয়টি জানেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্রীদের কাছ থেকে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ বিদ্যালয়ের দুজন খ-কালীন শিক্ষক ছিলেন- সোহেল ও বিল্লাল নামে। গত রবিবার তারা পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে চাকরি ছেড়ে দেন। সেই শিক্ষকদের আবার ফেরত আনার জন্য ছাত্রীরা দাবি জানিয়েছে। পুরো বিষয়টি তদন্ত করে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। (সুত্রঃ সময় টিভি)