শাহাদত হোসাইন: রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার ৩ নং পানানগর ইউনিয়নের এক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৯৬ জন শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা না পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার কিসমতটেকাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে উপজেলার মাত্র চারটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উপর অনুসন্ধান চালায় টিম “অগ্রযাত্রা”। সারেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তেবিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১১৭ জন এর মধ্যে ৮৫ জন শিক্ষার্থী উপবৃত্তির টাকা পায়। আর বাদবাকি শিক্ষার্থীদের জন্ম নিবন্ধন ও পাঁচ বছর না হওয়ার কারণে তারা উপবৃত্তির টাকা পায় না বলে জানিয়েন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান। কিন্তু এই ৮৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে থেকে অনেকেই টাকা পাননি আবার কেউ কেউ অর্ধেক টাকা পেয়েছেন।
ঘটনাটি কিছুদিন আগের, এক গরীব ভ্যানচালকের ছেলে জুনায়েদ আহমেদ সে প্রথম শ্রেণীর ছাত্র। গরিব ভ্যানচালক পিতা জুনায়েদের ছেড়া স্কুল ব্যাগ ও একটি ছাতা কিনে দেওয়ার বায়না পূরণ করতে পারছিলেন না। পিতা সেরাজুল ইসলাম ছেলেকে বলেছিলেন তোমার স্কুলের উপবৃত্তির টাকা পেলে তোমাকে এবার একটি নতুন স্কুল ব্যাগ ও একটি ছাতা কিনে দেব। তা আর হলো না, স্বপ্ন যেন স্বপ্নই রয়ে গেল। জুনায়েদের মোবাইলের বিকাশ ও নগদ একাউন্টে কোন টাকা আসেনি। যার কারনে দরিদ্র পিতা স্কুল ব্যাগ ও ছাতা কিনে দিতে পারেনি। এদিকে অনেকেই যখন উপবৃত্তির টাকা পেয়ে আনন্দিত, অন্য দিকে জুনায়েদের মন খারাপ। প্রথম শ্রেণীর ছাত্র জুনায়েদ খুব সহজ ভাবে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি চিঠি লিখে তা ফেসবুকে পোস্ট করেন। এরপরই দিন দিন ভাইরাল হতে থাকে তার সেই চিঠিটি। এরপর টিম “অগ্রযাত্রা” বিষয়টা খতিয়ে দেখার জন্য অনুসন্ধানের নামে।
জুনায়েদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে, তেবিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আরো অনেক শিক্ষার্থীর টাকা না পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন তেবিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক মোঃ মফির উদ্দিন।
একই উপজেলার আরও একটি কিসমত টেকাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সেখানে গিয়ে জানা যায়, এবার উক্ত স্কুল কর্তৃপক্ষ ১১৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য উপবৃত্তির চাহিদা পত্র উপজেলায় প্রেরণ করেন। এর মধ্যে ৯৬ জন শিক্ষার্থীর মোবাইলে কোন টাকা আসেনি। মাত্র ১৯ জন শিক্ষার্থী উপবৃত্তির টাকা পেয়েছে। এতে করে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা গেছে। বিষয়টি জানতে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান এসএম নজমুল হক এর সাথে দেখা করলে তিনিও বিষয়টি স্বীকার করেন। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আগে যে নাম্বারে আগে টাকা আসতো, সেই নাম্বারগুলো সেভাবেই রয়েছে, আগের ক্লাসগুলোতেও নিয়মিত টাকা আসতো, হঠাৎ এভাবে টাকা না আসায়, অনেক পরিবার ও শিক্ষার্থীরা হতাশ হয়েছেন।
৯০০ টাকা সরকারি উপবৃত্তি ও নতুন করে শিক্ষার্থীদের জামা কাপড় অথবা স্কুল ব্যাগ কেনার জন্য আরও এক হাজার টাকা অতিরিক্ত সরকার দিয়েছেন এবার, কিন্তু কোন কোন শিক্ষার্থী উপবৃত্তির নয়শ টাকা পেয়েছেন, আবার কোন কোন শিক্ষার্থী উপবৃত্তির ৯০০ টাকা না পেয়ে, এক হাজার টাকা, জামা-কাপড়, স্কুল ব্যাগ কেনার জন্য অতিরিক্ত যেটা সরকার দিয়েছিল ওই টাকা পেয়েছেন। অথচ এবার প্রতিটি শিক্ষার্থী সব মিলে ১৯০০ টাকা পাওয়ার কথা ছিল। এই টাকা গরমিলের বিষয়ে অনুসন্ধান চালানো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর, প্রধানরা কেউই সদুত্তর দিতে পারেনি।
তেবিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মফির উদ্দিন তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সার্ভারের সমস্যা ও যারা মেসেজ এসেছে টাকা পায়নি এমন তাদের অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে গিয়েছে। হ্যাকাররা টাকা তুলে নিয়েছে।
কিসমতটেকাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এসএম নজমুল হকের সাথে কথা হয়, ৯৬ জন শিক্ষার্থীর টাকা না পাওয়ার ব্যাপারে সে বিষয়ে তিনি বলেন, আগে ছিল নগদ একাউন্ট এবার নতুন করে যোগ করা হয়েছে বিকাশ একাউন্ট। অনেকের বিকাশ একাউন্ট পরে খোলা হয়েছে। যার কারণে শিক্ষার্থীদের কাছে টাকা পৌঁছায়নি। টাকাগুলো দিতে ঝামেলা হয়েছে, আমি উপজেলায় সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেছি, তারা বলেছেন যারা এখনো টাকা পায়নি, তারা খুব দ্রুত টাকা পেয়ে যাবেন। শিক্ষার্থীরা টাকা না পাওয়ায় আমি খুবই কষ্ট পাচ্ছি, আমি চরমভাবে ব্যথিত।
আড়বাব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মোসাঃ কামরুন নাহার তিনি বলেন, আমার স্কুলেও বেশ কয়েকজনের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটেছে। কেউ কেউ কোনো টাকা পয়সা পায়নি। আবার কারো কারো মেসেজ এসেছে অথচ অ্যাকাউন্টে তুলতে গিয়ে টাকা পায়নি। আবার অনেকের শুধু ৯০০ টাকা এসেছে জামা কাপড় ব্যাগ কেনার ১০০০ টাকা আসেনি বা পায়নি। কেউ আবার জামা কাপড় ব্যাগ কেনার ১০০০ টাকা পেয়েছে উপবৃত্তি ৯০০ টাকা পায়নি। অথচ ১৯০০ টাকা পাওয়ার কথা ছিল। কি কারনে এমন হয়েছে আমি জানিনা তবে সংশ্লিষ্টদের সাথে এই বিষয়ে কথা চলছে।
এই বিষয়ে মুঠো ফোনে জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা অফিসার (টিও) মোঃ মোখলেসুর রহমান তিনি বলেন, ওইটা আমরা জানি, বিকাশ-নগদ একাউন্ট সংক্রান্ত সমস্যার কারণে টাকা আবার অধিদপ্তরে ফেরত চলে গেছে। খুব দ্রুত টাকাগুলো ছাত্ররা যেন পায় সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে।