• সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:১৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম
রাজশাহীতে নার্সিং শিক্ষার্থীদের এবার প্রতীকি ক্লাস ও বই পড়া কর্মসূচি আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন উপলক্ষে তাহেরপুর পৌরসভায় মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা গণপিটুনিতে মৃত্যু রাজশাহীতে অধ্যক্ষের সাথে নারী প্রভাষকের পরকীয়ার সময় ধরে থানায় দিল জনতা দুর্গাপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল প্রতিনিধিদের দৌরাত্বে অতিষ্ঠ রোগী ও স্বজনরা রাজশাহীতে বিএনপির বিরুদ্ধে বিএনপির সংবাদ সম্মেলন গণঅধিকার পরিষদ ট্রাক প্রতীকে নিবন্ধন পাওয়ায় মানিকগঞ্জে আনন্দ মিছিল রাজশাহীর দুর্গাপুর প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক সমাজের আহ্বায়ক কমিটি গঠন বাগমারার সাবেক এমপি-মেয়রের বিভিন্ন অপকর্মের বিচার চেয়ে মানববন্ধন পুঠিয়ায় হাসিনা, কাদের ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সহ ১৮১ জনের নামে হত্যা মামলা দায়ের

ইসলাম ছেড়ে হিন্দু হওয়া পরিবারটি আবার মুসলিম হলো কেনো

সংবাদদাতা:
সংবাদ প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২
ইসলাম ছেড়ে হিন্দু হওয়া পরিবারটি আবার মুসলিম হলো কেনো
ইসলাম ছেড়ে হিন্দু হওয়া পরিবারটি আবার মুসলিম হলো কেনো

মুসলমান থেকে হিন্দু হয়ে যাওয়া এক পরিবারের অধিকাংশই আবার ফিরে গেছে ইসলাম ধর্মেধর্মে। দিলশাদ, নওশাদ আর ইরশাদ হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেন ২০১৮ সালে। বিডি নিউজ২৩: চার বছরের এক শিশু কী করে আর জানবে যে ধর্মটা কি! তাকে যদি জোয়া নামে ডাকা হয়, তাহলেও তার বোঝার ক্ষমতা নেই যে তার বাবা মা মুসলমান, তাই তার এই নাম রাখা হয়েছে।

 

শিশুদের ধর্ম কী হবে, সেই সিদ্ধান্ত তাদের নিজ পছন্দ-অপছন্দের ওপরে নির্ভর করে না। সারা পৃথিবীতেই বাবা-মায়ের সিদ্ধান্তে ঠিক হয় যে শিশুর ধর্ম কী হবে।

 

বাবা-মা যদি ধর্ম পরিবর্তন করে ফেলেন, তাহলে শিশুটিকেও সেই পরিবর্তিত ধর্ম মেনে নিতে হয়।

 

উত্তর প্রদেশের বাগপত জেলার বদরখা গ্রামের চার বছরের শিশুটির নাম যখন আমি জানতে চেয়েছিলাম, সে বলেছিল তার নাম জোয়া।

 

জোয়া একটু লজ্জাই পাচ্ছিল। নাম বলেই সে মুখে হাত চাপা দিয়েছিল। বোনের কথা মতো সে আমাকে আবার বলল যে তার নাম গুড়িয়া।

 

এর মধ্যেই জোয়ার ভাইকে প্রতিবেশী এক শিশু আনাস নামে ডাকল। সাত বছর বয়সী আনাস তার বাবা দিলশাদের দিকে তাকাচ্ছিল। দিলশাদ প্রতিবেশী ওই শিশুটিকে একটু বকলেন।

 

“স্কুলে ওর নাম অমর সিং। স্কুলের নামেই ওকে ডাকবে,” কড়া গলায় বললেন দিলশাদ।

 

প্রতিবেশী শিশুটি দিলশাদের জবাব শুনে একটু মন খারাপ করে চুপচাপ চলে গেল।

 

সীমা, গুড়িয়া, অমর সিং, সারিকা আর সোনিয়া এরা সবাই দিলের সিংয়ের ছেলে মেয়ে। দিলের সিংয়ের নাম আগে ছিল দিলশাদ।

 

হিন্দু ধর্ম কেন নিয়েছিল এই পরিবারটি?

 

দিলশাদের পরিবারের ১৩ জন সদস্য ২০১৮ সালে মুসলমান থেকে হিন্দু হয়ে গিয়েছিলেন। এর মধ্যে তারা তিন ভাই – নওশাদ, দিলশাদ আর ইরশাদ ছাড়াও তাদের স্ত্রী আর সন্তানরাও ছিলেন।

 

এদের বাবা আখতার আলি ও তার স্ত্রীও হিন্দু হয়ে গিয়েছিলেন।

 

সেই সময়ে এদের অভিযোগ ছিল যে প্রয়োজনের সময়ে মুসলমান সমাজ তাদের পাশে এসে দাঁড়ায় নি। তাই ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তারা।

 

যে সময়ে পরিবারটি হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছিল, তখন জোয়ার বয়স ছিল মাত্র ছয় মাস।

 

নওশাদ রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। দিলশাদ গ্রামে ঘুরে ঘুরে পোশাক বিক্রি করেন। আর ইরশাদ কাপড় ফেরি করেন। এদের বাবাও একই কাজ করেন, কিন্তু বয়সের কারণে এখন আর তিনি রোজগারের জন্য বেরুতে পারেন না।

 

‘মুসলমানরা পাশে দাঁড়ায় নি’ আখতার আলির ছোট ছেলে গুলশানের মৃতদেহ সন্দেহজনক অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল ২০১৮ সালে। মি. আলির কথায়, ছেলেকে খুন করা হয়েছিল। সেই ঘটনার সময়ে নিজের ধর্মের মানুষ পরিবারের পাশে দাঁড়ায় নি।

 

কিন্তু ‘যুবা হিন্দু বাহিনী’ সেই সময়ে খুব সাহায্য করেছিল। তারপরেই পরিবারটি সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করবে।

 

ধর্ম বদলের পরে গ্রামেরই জগবীর সিংয়ের বাড়িতে ভাড়া থাকতে শুরু করে আখতার আলির পরিবার।

 

তবে তাদের হিন্দু হয়ে ওঠার সময়টা খুব বেশিদিন টেকে নি। পরিবারের নারী সদস্যরা গোড়া থেকেই হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করতে নারাজ ছিলেন।

 

নওশাদের সংসার ভেঙ্গে যায়

হিন্দু হয়ে যাওয়ার পরে নওশাদের স্ত্রী নিজের মায়ের কাছে ফিরে গেছেন। তিনি বলেছিলেন, হিন্দু হয়ে যাওয়ার পরে তাদের বিয়ের তো আর কোনও অস্তিত্বই নেই, তাই তিনি আর ফিরে আসবেন না।

 

নওশাদ বলছিলেন যে তার পক্ষে একা থাকা খুব কঠিন হয়ে উঠেছিল। বাচ্চারাও তাদের মায়ের সঙ্গেই চলে গিয়েছিল।

 

হিন্দু হয়ে কী লাভ হল? দু’মাস পরে নওশাদ আবারও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন – আর তার ছেড়ে যাওয়া স্ত্রীকেই আবারও বিয়ে করেন।

 

হিন্দু ধর্ম নেওয়ার পরে ইরশাদ নিজের নাম রেখেছিলেন কবি।

 

তিনি বলছিলেন, “যা ভেবে হিন্দু হয়েছিলাম, তার তো কিছুই পাই নি। সুবিচার পাওয়ার আশায় হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু এখানে কিছুই পাই নি।

 

“হিন্দু তো হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু আত্মীয় স্বজন সবাই তো মুসলমান। হিন্দু হওয়ার পরে আমাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল সবাই। কেউ আমাদের ফোন পর্যন্ত ধরত না।”

 

“অন্যদিকে হিন্দুদের মধ্যে আবার জাতপাতের ভেদাভেদ আছে। হিন্দু তো হয়েছিলাম, কিন্তু জাতি কী হবে আমাদের! আর জাতি ঠিক না হলে বিয়ে-শাদি কী করে হবে? আমার মনে হচ্ছিল যেন নিজেদের পায়েই কুড়ুল মেরেছি আমরা,” জানাচ্ছিলেন ইরশাদ।

 

‘জানতাম হিন্দু সমাজ মেনে নেবে না’

আখতার আলির পরিবারের বড় বউ শাবরা খাতুনের কথায়, “আমি জানতাম যে কোনও হিন্দু আমাদের মেনে নেবে না। তাই আমি ঠিক করে নিয়েছিলাম যতই সমস্যা হোক আমি হিন্দু হব না। আমার সন্তানদের কে বিয়ে করবে? আর হিন্দু হলেই আমি তো আর ব্রাহ্মণ হয়ে যাব না। দলিতই তো থাকতে হবে। তাই কেন অকারণে আমি ছোঁয়াছুঁয়িয়ের মতো ব্যাপারে জড়াব! দেখুন, মুসলমান হওয়া সোজা। কিন্তু হিন্দু হয়েও পুরনো জীবন থেকে কি আপনি মুক্ত হতে পারবেন?”

 

আখতার আলির পুরো পরিবারই তাই আবারও মুসলমান হয়ে গেছেন। শুধুমাত্র দিলশাদই এখনও হিন্দু থেকে গেছেন।

 

২০১৮ সালে নিজের নাম দিলের সিং রেখেছিলেন, আর পাঁচ সন্তানেরও হিন্দু নাম রেখেছেন। স্ত্রীর নাম পালটিয়ে করেছেন মঞ্জু।

 

দিলের সিং তো গত চার বছর ধরে হিন্দু ধর্ম পালন করছেন। তাতে কি তার কোনও লাভ হয়েছে?

 

ছবির ক্যাপশান,

গ্রামের শিবমন্দিরে বসে আছেন একদা মুসলমান, বর্তমানে হিন্দু দিলের সিং

 

এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। তারপরে বললেন, “কী লাভের আশা করেছিলাম? কিছু তো পাওয়া যায় পরিশ্রম দিয়ে।”

 

“শুধু একটাই পাওয়া যে গ্রামের হিন্দুরা আমাদের সাহায্য করেছে। জয়বীর সিং থাকার জন্য ঘর দিয়েছিলেন। আমার ভাইরা তো আবারও মুসলমান হয়ে গেছে, কিন্তু তাদের বাড়ি থেকে বার করে দেন নি উনি।”

 

হিন্দুরা কী বলছে? বাড়িওয়ালা জয়বীর সিংয়ের পরিবারের সদস্য সুখবীর সিং বলছেন, “এদের তো ঘর ভাড়া দিয়েছিলাম এজন্য নয় যে তারা হিন্দু হয়ে গেছে। ঘর খালি ছিল, আর বাড়িতে লোক থাকলে ঘরদোর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকবে – এই জন্যই ভাড়া দেওয়া হয়েছিল। এরা কে কোন ধর্মে থাকবেন, সেটা তাদের ব্যাপার। আমাদের বিচার্য নয় সেটা।”

 

তিনি আরও বলছিলেন, “দেখুন, হিন্দু থেকে মুসলমান হওয়া সোজা, কিন্তু মুসলমান থেকে হিন্দু হয়ে ওঠা কঠিন। হিন্দু সমাজে জাতপাত এখনও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখনও নিজের জাতের মধ্যেই বিয়ে-শাদি হয়। কেউ মুসলমান থেকে হিন্দু হলেও কোন জাতি তাকে গ্রহণ করবে? জাত তো জন্মগত বিষয়। জাত তো আর নিজের পছন্দ মতো বেছে নেওয়া যায় না।”

 

“মনে করুন এরা আমাদের জাত – জাঠ হতে চান। কিন্তু কোন জাঠ এদের স্বীকার করে নেবেন?

 

‘ঘর ওয়াপসি’ কি ধোঁকা? কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুল মতিন বলছেন, ভারতে ‘ঘরে ফেরা’র যে স্লোগান দেওয়া হচ্ছে, সেটা আসলে একটা ধোঁকা।

 

“ঘর ওয়াপসি বা ঘরে ফেরার আওয়াজ তো তোলা হচ্ছে, কিন্তু কোন ঘরে ফেরার কথা বলা হচ্ছে? ঘরে ফেরার পরে বারান্দায় রাখা হবে না গ্যারাজে? আমার তো মনে হয় ঘরের ডোরবেল বাজালেও ঘর কেউই খুলবে না। আসলে হিন্দু ধর্মে যে জাতপাতের ব্যবস্থা আছে, সেটাকে ভেঙ্গে ফেলা অত সোজা নয়। আম্বেদকরই ভাঙতে পারেন নি, তাই তো তিনি পরাজয় স্বীকার করে বৌদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন,” বলছিলেন অধ্যাপক মতিন।

 

‘ঘরে ফেরা’র পরে ঘরে কি ঠাঁই হল?

তার কথায়, “যারা হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করছে, তারা কিন্তু হৃদয় পরিবর্তনের কারণে ধর্ম বদল করছেন না। এই ধর্ম পরিবর্তনের পিছনে আসলে রাজনীতি রয়েছে।

 

“যদি কোনও মুসলমানের হৃদয় পরিবর্তনের ফলেও হিন্দু হয়ে যান, হিন্দু সমাজের হৃদয়ে কি বদল ঘটবে হিন্দু সমাজ কি উদার হয়ে তাদের আপন করে নিতে পারবে?”প্রশ্ন অধ্যাপক মতিনের।

 

বিশ্ব হিন্দু পরিষদের যুগ্ম সচিব সুরেন্দ্র জৈন বলছেন, “ইসলাম থেকে যারা হিন্দু হচ্ছে, তাদের সামনে একটা সমস্যা হচ্ছে। এদের স্বীকার করে নেওয়া নিয়েও কথা উঠছে। কিন্তু আমরা এর একটা সমাধান বার করেছি।

 

“যাদের পূর্ব পুরুষরা যে জাতির ছিলেন, ধর্মান্তরের পরে তাদের জাত সেটাই হবে। এখানকার সব মুসলমানের পূর্ব পুরুষই তো হিন্দু ছিলেন, আর তাদের জাত ধর্ম সম্বন্ধে সবারই জানা আছে। যেমন কাশ্মীরের শেখ আবদুল্লার পরিবার তো কউল ব্রাহ্মণ ছিলেন। জিন্নার পরিবারের ইতিহাসও তো সবার জানা আছে যে তার পূর্বপুরুষরা গুজরাতের লোহানা-ঠক্কর জাতের মানুষ ছিলেন,” বলছিলেন মি. জৈন।

 

হিন্দু ধর্ম গ্রহণের পরে জাত কীভাবে ঠিক হবে?

মি. জৈনের কথায়, “হরিয়ানায় এটা ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। জাঠরা ইসলাম থেকে হিন্দুত্ব গ্রহণ করা মানুষদের স্বীকার করে নিতে শুরু করেছেন। তাই ‘ঘর ওয়াপসি’ বা ঘরে ফেরা শুধু একটা স্লোগান নয় কাজও চলছে। যারা বলছে মুসলমানদের মধ্যে জাতিভেদ নেই, তারা ইসলাম সম্বন্ধে জানেই না। শিয়া-সুন্নির মধ্যে বিরোধের ব্যাপারে কে না জানে।”

 

গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক গৌরাঙ্গ জানির কথায়, “সুরেন্দ্র জৈন তো এটা বলতে পারতেন যে জাত মুক্ত সমাজ গড়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। যাতে জাতপাতের নামে ভেদাভেদ দূর হয়। কিন্তু তারা বর্ণাশ্রম প্রথাকে ছাড়তে চান না। সেজন্যই মুসলমান থেকে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করা ব্যক্তিদেরও তারা এখন জাতের ভিত্তিতে ভাগাভাগি করছেন।”

 

তার কথায়, “গত দশ বছরে মুসলমানদের যে ছবি এরা ফুটিয়ে তুলেছেন মানুষের মনে, তার পরে তাদের ঘৃণা করবে না স্বীকার করে নেবে? বিশ্ব হিন্দু পরিষদ নিজেই নিজেদের এই প্রশ্নটা করুক। হিন্দুদের মনে যদি যদি মুসলমানদের প্রতি এতটাই দয়া মায়া থাকে – তাহলে মুসলমানদের ঘর ভাড়া দেয় না কেন?”

 

কেন ইসলামে ফিরে গেল পরিবারটি?

আখতার আলির পরিবারকে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করতে সহায়তা করেছিলেন ‘যুবা হিন্দু বাহিনী’র বাগপত জেলা প্রেসিডেন্ট যোগেন্দ্র তোমর।

 

তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম যে পরিবারটি কেন আবারও ইসলাম ধর্মে ফিরে গেল?

 

“তাদের স্ত্রী-সন্তানরা বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিল। সেজন্যই তাদেরও ফিরে যেতে হয়েছে। কিন্তু আমরা চেষ্টা ছাড়ি নি। আমরা চাই সব মুসলমানই ঘরে ফিরে আসুক ধর্ম বদল করে।

 

ওয়াসিম রিজভি কী পেলেন হিন্দু হয়ে?

উত্তর প্রদেশের শিয়া ওয়াকফ বোর্ডের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ওয়াসিম রিজভি গত বছর ৫ ডিসেম্বর হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করে নিজের নাম জিতেন্দ্র নারায়ণ সিং ত্যাগী করেছেন।

 

একান্ন বছরের জীবনে মি. ত্যাগী ৫০ বছরই মুসলমান ছিলেন। গত দশ মাস ধরে তিনি হিন্দু।

 

কীভাবে দেখছেন গত দশ মাসের জীবন?

 

মি. ত্যাগীর কথায়, “সনাতন ধর্ম গ্রহণ করলে যে সব সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে, তার আন্দাজ আমার আগে থেকেই ছিল। এখানে মানুষ আপন করে নেয় না। সবথেকে বড় সমস্যা তো জাতি নিয়ে। যদি আপনি কোনও জাত গ্রহণও করেন, তাহলেও সেই জাতের মানুষ তো আপনাকে মেনে নেবে না।”

 

যেমন আমি আমার নাম রেখেছি ত্যাগী, তা সত্ত্বেও কি ত্যাগী সমাজ আমার সঙ্গে কোনও ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে যাবে? আমার অতীতই তাদের মেনে নিতে বাধা দেবে। সনাতন ধর্মের সমস্যা এটাই। ইসলাম আজ পৃথিবীর দ্বিতীয় সবথেকে বড় ধর্ম হয়ে উঠেছে, তার মধ্যে কিছু ভাল জিনিষ তো নিশ্চয়ই আছে,” মন্তব্য মি. ত্যাগীর।

 

আপনি একবার ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে আপনার ইতিহাস, অতীত এসব কিছু নিয়েই আর কেউ মাথা ঘামায় না। সেখানে বিয়ে-শাদির ব্যাপারেও এগুলো কোনও সমস্যা নয়। আমি জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সনাতন ধর্মেই থাকব, কিন্তু এটাও জানি কেউই আমার সঙ্গে বৈবাহিক বা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলবে না। যখন মুসলমান ছিলাম, তখন স্বস্তি ছিল না, আর এখন এখানে এসেও নিজেকে কেমন ভিন্ন মনে হয়” বলছিলেন জিতেন্দ্র নারায়ণ ত্যাগী।

 

সনাতন ধর্ম গ্রহণ করার পরে তার বিয়ে ভেঙে গেছে। পরিবারেও প্রভাব পড়েছে।

 

সত্যি কথা বলতে আমি যেন নিজের জীবনে বিষ মিশিয়ে দিয়েছি। এজন্যই আমি পুরো পরিবার নিয়ে হিন্দুত্ব গ্রহণ করি নি। আগে আমি নিজে ধর্ম বদল করে দেখতে চেয়েছিলাম। ভালই হয়েছে যে গোটা পরিবারকে আনি নি,” – জানাচ্ছিলেন মি. ত্যাগী। গত ডিসেম্বরে ধর্ম পরিবর্তন করছেন ওয়াসিম রিজভি

 

ধর্ম এত গুরুত্বপূর্ণ কেন? মানুষের জীবনে ধর্ম কি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে এর জন্য বিয়ে, পরিবার – এসবও তুচ্ছ হয়ে যেতে পারে?

 

এই প্রশ্নের জবাবে মি. ত্যাগী বলছিলেন, মনুষ্যত্বের থেকে বড় তো কোনও কিছু হতে পারে না। তবে হ্যাঁ, আমি ধর্মকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। আমি শুধু এটুকুই বলতে পারি যে ঘর ওয়াপসিকে যদি সত্যিই সফল করতে হয়, তাহলে হিন্দু ধর্মকে দুহাত দিয়ে স্বাগত জানাতে হবে, নাহলে এটা শুধুই রাজনীতির খেলা হয়ে দাঁড়াবে।”

 

মি. ত্যাগীর অভিমান প্রসঙ্গে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সুরেন্দ্র জৈন বলছিলেন, “ওয়াসিম রিজভি আসলে সংবাদ মাধ্যমে আসতে আর বিতর্কিত মন্তব্য করতে খুব পছন্দ করেন। আমরা বিশ্ব হিন্দু পরিষদের লোকরা কিন্তু পয়গম্বরকে নিয়ে কোনও আপত্তিজনক কথা বলি না। আসাদুদ্দিন ওয়েইসিকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল যখন তিনি কৌশল্যা আর রামের ব্যাপারে মন্তব্য করেছিলেন।

 

ওয়েইসির উদ্দেশ্যে আমরা বলেছিলাম যে তিনি না থামলে যে আমরাও পয়গম্বর কে নিয়ে বলতে শুরু করব, সেই হুমকি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কখনও কিছু বলি নি আমরা। ওয়াসিম রিজভিরও এই কথাগুলো খেয়াল রাখা উচিত ছিল। তার কোনও সমস্যা হলে আমাদের সঙ্গে কথা বলতে পারতেন, মিডিয়াতে যা মনে হল বলে দিতে শুরু করলেন তিনি” বলছিলেন সুরেন্দ্র জৈন।

 

অন্যদিকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞানের অধ্যাপক হিমাদ্রি চ্যাটার্জী মনে করেন না যে ইসলাম ধর্ম নেওয়ার পরে সেখানেও বৈবাহিক বা ঘনিষ্ঠ পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ভেদাভেদ হয় না।

 

তার কথায়, কোনও আশফাক কি পসমন্দা মুসলমানের পরিবারে বিয়ে করবে? সেখানেও দলিত শ্রেণীর অবস্থা একই। কেউ কোনও ধর্ম পরিবর্তন করলেও তার সামাজিক পরিচয়ও নতুন ধর্মেও চলেই আসে।

 

“ঘর ওয়াপসি করার পরে যে জাতি পরিচয় দেওয়ার কথা সুরেন্দ্র জৈন বলছেন, এটা তো আরও হাস্যকর হয়ে যাচ্ছে। তাহলে তো হিন্দু ধর্ম গ্রন্থে সংশোধন করতে হবে। সেটা কি এতই সোজা? আম্বেদকর কেন হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন? অনেক গবেষণা করে ভাবনা চিন্তা করেই তিনি বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন” প্রশ্ন অধ্যাপক চ্যাটার্জীর।

 

তিনি বলছিলেন, আমি অধ্যাপক মতিনের কথাটা আরও একটু এগিয়ে নিয়ে আমি প্রশ্ন তুলতে চাই যে ঘরে ফেরার পরে মাস্টার বেডরুমে প্রবেশাধিকার কি থাকবে? যদি কারও পূর্বপুরুষরা দলিত হয়ে থাকেন, তাহলে কোনও মুসলমান হিন্দু ধর্মে ফিরে এলে তাকে কেন দলিত হয়ে থাকতে হবে? কেউ যদি হিন্দু ধর্ম পরিবর্তন করার শর্ত হিসাবে বলে যে ব্রাহ্মণ করতে হবে তাকে, সেটা কি মি. জৈন মেনে নেবেন? ধর্ম বদল করে কেউ কেন বাড়ির গ্যারাজে থাকতে রাজী হবে? মি. জৈন তাদের মাস্টার বেডরুমের ব্যবস্থা করুন।”

 

শুধু নামটাই বদলিয়েছে। দিলের সিং যখন দিলশাদ ছিলেন, তখন গ্রামে ঘুরে ঘুরে কাপড় বিক্রি করতেন। চার বছর পরে তিনি সেই একই কাজ করে চলেছেন।

 

তার স্ত্রী মানসু থেকে মঞ্জু হয়ে গিয়েছেন। কিন্তু এখনও তিনি আগের মতোই ৫ সন্তান আর স্বামীর জন্য রান্না করেন, তাদের সামনে খাবার তুলে দেন।

 

আর নামে কী বা এসে যায়! অধ্যাপক চ্যাটার্জী বলছিলেন, “ঘরে ওয়াপসির বদলে নাম ওয়াপসি করা হলে ভাল হত। কারণ এখানে ঘরই তো দেওয়া হচ্ছে না কাউকে। সুত্র: বিবিসি বাংলা

সংবাদটি শেয়ার করুন


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর

Recent Comments

No comments to show.