বিডি নিউজ২৩: নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামান আসাদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে অপপ্রচারের অভিযোগে মারধরে গুরুতর আহত ছাত্রলীগের সাবেক নেতা জামিউল আলীম জীবন (২১) মারা গেছেন। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার চাচা ফরমাজুল ইসলাম।
এর আগে তিনি মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান বলে স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যেমে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। নিহত জামিউল আলীম জীবন নলডাঙ্গা শহীদ নজমুল হক ডিগ্রি কলেজের বিএ শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ও থানা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক। বিয়ের পর ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড থেকে তিনি অব্যাহতি নিয়েছিলেন। দেড় বছর আগে বিয়ে করা জামিউল আলীম জীবনের তিন মাস বয়সী একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।
এর আগে সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাতে উপজেলার রামশার কাজীপুর আমতলী বাজার সংলগ্ন চারমাথা মোড়ে জামিউল আলীম জীবন ও তার পিতাকে মারধরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার আহত জীবনের বাবা ফরহাদ হোসেন (৫৩) এখনও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। জামিউল আলীম জীবন নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার রামশার কাজীপুরের ফরহাদ হোসেন শাহের ছেলে।
জামিউল আলিম জীবনের আহত পিতা ফরহাদ হোসেন শাহ ওই গ্রামের মৃত ফয়েজ উদ্দিন শাহের ছেলে এবং নলডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম ফিরোজের আপন ভাই।
জীবনের পরিবার জানায়, শনিবার রামশার কাজীপুর আমতলী বাজারের জামে মসজিদে মাগরিবের নামাজের পর মসজিদের ভেতর থেকে মাইকের যন্ত্রাংশ চুরির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নলডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান আসদুজ্জামান আসাদ ওই গ্রামের কয়েকজনকে চুরির সাথে জড়িত বলে সন্দেহ করেন। এ নিয়ে চেয়ারম্যান সালিসি বৈঠক বসিয়ে সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। একপর্যায়ে উপজেলা চেয়ারম্যান তার প্রতিবেশী জামিউল আলিম জীবনকে দোষী সাব্যস্ত করেন। পরে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জামিউল আলিম জীবন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদকে উদ্দেশ্য করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস ও লাইভ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদ।
ফেসবুকে লাইভ-স্ট্যাটাস দেয়াকে কেন্দ্র করে সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় নলডাঙ্গা উপজেলার আমতলী বাজারে জীবন ও তার পিতা ফরহাদ হোসেনকে ডেকে নেন উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে চেয়ারম্যান আসাদ ও তার দুই ভাই ফয়সাল ও আলিম আল রাজিসহ সহযোগীরা বাবা-ছেলেকে মারধর করেন। হামলাকারীরা রড, বাঁশের লাঠি ও ধারালো হাঁসুয়া দিয়ে তাদের আঘাত করে গুরুতর জখম করেন। আহত অবস্থায় তাদেরকে প্রথমে নাটোর সদর হাসপাতালে এবং পরে ওই দিন রাতেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে জীবনের অবস্থায় অবনতি হলে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।
এদিকে, ফেসবুকে থানা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা জামিউল আলীম জীবন মারা গেছেন বলে গুজব ছড়িয়ে পড়লে নলডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের আসাদুজ্জামান আসাদ বিরোধী গ্রুপ উপজেলা চেয়ারম্যানকে গ্রেফতারের দাবিতে মঙ্গলবার রাতে উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।
আহত ফরহাদ হোসেনের ছোট ভাই এস এম ফকরুদ্দিন ফুটু বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদ অন্যায়ভাবে তার ভাই ও ভাতিজাকে বেদম মারধর করেছে।
তার অপর ভাই নলডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম ফিরোজ বলেন, জামিউল কোনো অপরাধ করে থাকলে উপজেলা চেয়ারম্যান আমাকে জানাতে পারতেন। কিন্তু সরকারি লোক হয়েও তিনি আক্রোশ মেটাতে তিন ভাই ও অন্য লোকজন নিয়ে তাদের নির্মমভাবে মারধর করেছে। আমি দ্রুত চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
এ ঘটনায় দুপুরে আহত ফরহাদ হোসেন শাহের স্ত্রী জাহানারা বেগম (জামিউল আলীম জীবনের মা) বাদী হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদ, তার ছোট দুই ভাই ফয়সাল ও আলিম আল রাজি ও অজ্ঞাত আরও চার-পাঁচজনের নামে নলডাঙ্গা থানায় তার স্বামী-সন্তানকে মারধরের অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগ দায়েরর বিষয়টি নিশ্চিত করে নলডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম জানান, মারধরের ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুরে জাহানারা বেগম উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদ ও তার দুই ভাইকে অভিযুক্ত করে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে নলডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ আসাদুজ্জামান আসাদ সাংবাদিকদের জানান, জীবন ও তার বাবা নেশাখোর। জীবন ফেসবুক লাইভে এসে তার বিরুদ্ধে অনেক মিথ্যা বিষোদগার করেছেন।