শাহাদত হোসাইন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট: রাজশাহীর পুঠিয়ায় স্কুলের খেলার মাঠ ভাড়া দেওয়ায় চড়ম ভোগান্তিতে পড়েছেন এলাকাবাসী, ও শিক্ষার্থীরা। অল্প একটু বৃষ্টিতে তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। ঘরবন্দী হয়ে পড়ে স্কুলের আশেপাশের মানুষ।
গত প্রায় ২ বছর করোনা কালীন সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায়, সে সময় স্কুল কর্তৃপক্ষ স্কুলের খেলার মাঠটি ভাড়া দিয়েছিলেন একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে।
ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার ধোকড়াকুল উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে। বর্তমানে ওই খেলার মাঠটি দেখতে মনে হচ্ছে পুকুরের মতো।
জানা যায়, স্কুল কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে ধোকড়াকুল উচ্চবিদ্যালয়ের খেলার মাঠ ২ লক্ষ টাকায় ভাড়া দেওয়া হয়, মেসার্স আমিনুল হক প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তারপর থেকে পুঠিয়া থেকে ভবানীগঞ্জ এই সড়ক নির্মাণের জন্য, তাদের রাস্তা নির্মাণের সামগ্রী ও ভারী যানবাহন ওই স্কুল মাঠে রাখতে থাকে। ভারি যানবাহন ও সড়ক নির্মাণের সামগ্রী রাখায় স্কুল মাঠটি ইতোমধ্যেই খেলার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পাথর ভর্তি ভারি যান চলাচলের কারণে খেলার মাঠের মধ্যে নানান রকম গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। একটু দূর থেকে দেখলে মনে হবে খুব সুন্দর একটি পুকুর। দূর থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এটা কোনো স্কুলের খেলার মাঠ। ব্যাপক সমস্যার মধ্যে আছেন স্কুলের আশেপাশে বসবাস করা বাড়িঘর গুলোর মানুষ। তৈরি হয়েছে দারুন রকম জলাবদ্ধতা। স্কুলের মাঠের মধ্যে এখন অনেকেই দেখা যাচ্ছে মাছ ধরতে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ইউপি সদস্য জুয়েল মেম্বার বলেন, স্কুলের খেলার মাঠের ওই জলাবদ্ধতা ও সমস্যার বিষয়ে আমি ও এলাকাবাসীর কয়েকজন মিলে স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানাতে গেলে, তারা আমাদেরকে চাঁদাবাজ বলে হুমকি দেয়। আর চাঁদাবাজির মামলা দেওয়ারও হুমকি দিয়েছিল। তাই আমি আর স্কুলের মাঠের ওই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করিনা। তবে স্কুল মাঠটি কবে ভাড়া দেওয়া হয়েছে, তা আমি জানিনা। পরবর্তীতে তা মানুষের মুখ থেকে জানতে পারি।
ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসীরা বলছেন, স্কুলের মাঠটি ভাড়া দেওয়ার কারণে আমরা এলাকাবাসীরা চরম বিপাকে পড়েছি। অল্প একটু বৃষ্টিতে এখানে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। আর স্কুলের খেলার মাঠে বহুদিন থেকে ছাত্ররা খেলতেই পারে না। স্কুল মাঠের জলাবদ্ধতা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য স্থানীয় ভালুক গাছি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাকবীর হাসান তিনি সেখানে একটি সিমেন্টের তৈরি মোটা পাইপ (চুং) দিয়েছিলেন তাতে করে অনেকটাই দুর্ভোগ কমেছিল এলাকাবাসীর। কিন্তু খেলার মাঠ ভাড়া দেওয়ার পর থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভারী ভারী যান চলাচলের কারণে সেটি ভেঙ্গে নষ্ট হয়ে যায়। যার কারণে পানি নিষ্কাশনের আর কোন জায়গা না থাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এলাকাবাসী যে রাস্তা দিয়ে চলাচল করতো, সে রাস্তায় গাড়ি চলাচলের কারণে, দেবে গিয়ে, এখন ওই রাস্তাই পানি নিষ্কাশনের সহায়ক হয়ে উঠছে। ওই রাস্তা দিয়ে এলাকাবাসী, হাই স্কুল এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কলেজের বহু শিক্ষার্থী চলাচল করে। মাঠটি ভাড়া দেওয়ার সময় দুর্নীতি ও করা হয়েছে।
এলাকার মহিলারাও বলছেন, জলাবদ্ধতার কারণে আমাদের বাড়ি ঘরে পানি উঠে গেছে। রান্না করার কোন ব্যবস্থা নেই। আমাদের গ্রামের এলাকা, যেখানে রান্না করি সেখানেও পানি উঠে গেছে। চরম ভোগান্তির মধ্যে আছি আমরা বেশ কয়েকটি পরিবার।
ধোকড়াকুল উচ্চ বিদ্যালয় এর ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি খলিলুর রহমান জানান, স্কুলের স্বার্থে খেলার মাঠটি ভাড়া দেওয়া হয়েছে।
পুঠিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান জি এম হীরাবাচু বলেন, এই বিষয় নিয়ে আমি উপজেলা এবং জেলার মিটিংয়েও বলেছি। মূলত ধোকড়াকুল এলাকা আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকা। সেখানে প্রায় দুই বছরের অধিক সময় ধরে কোন ফুটবল খেলা হয় না। ওই এলাকা থেকে আমাদের গর্বিত একজন ফুটবলারও তৈরি হয়েছে। অথচ সেখানে এমন কাজ মেনে নেওয়ার মতো নয়। আমি আশা করি খুব দ্রুত স্কুলের খেলার মাঠটি ফেরত আসবে এবং ছাত্ররা ওই মাঠে খেলাধুলা করতে পারবে। অল্প কিছু মানুষের স্বার্থের জন্য খেলার মাঠ ভাড়া বা টেন্ডার দেওয়া ঠিক হয়নি।