বিডি নিউজ২৩: করোনাকালে বাবার সঙ্গে হালচাষে ব্যস্ত থাকতে হয়েছিল মারুফা আক্তারকে। অভাব-অনটনে খেলা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়ার কথাও ভাবছিলেন। পরিবারের আর্থিক দুরবস্থার কথা জেনে এগিয়ে আসে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। নতুন উদ্যম নিয়ে প্রতিভাবান এ পেসার ফিরে যান আগের ঠিকানা বিকেএসপিতে। ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক নৈপুণ্য দেখিয়ে ১৯ বছর বয়সেই ডাক পেয়ে গেলেন জাতীয় দলেও।
রোববার টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের জন্য ১৫ সদস্যের দল দিয়েছে বিসিবি। যেখানে নতুন মুখ মারুফা। ফিরেছেন জাহানারা আলম। বাদ পড়েছেন ডানহাতি পেসার সুরাইয়া আজমিন ছন্দা ও বাঁহাতি পেসার ফারিহা ইসলাম।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে হবে বাছাইপর্ব, সূচি চূড়ান্ত হয়েছে আগেই। ক্যাম্প করার জন্য আগেভাগে সেখানে যাবে লাল-সবুজের মেয়েরা। ৮ সেপ্টেম্বর যাত্রা করবে বাংলাদেশ। এটিই হবে মারুফার প্রথম বিদেশ সফর।
নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার কৃষক বাবার সন্তান মারুফা গায়ে জড়াবেন বাংলাদেশের লাল-সবুজ জার্সি। চ্যানেল আই অনলাইনকে কাঁপাকাঁপা কণ্ঠে জানালেন অনুভূতি, ‘খুব ভালো লাগছে। বলে বোঝাতে পারব না। জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছি এটাই শেষ না। এখন আমার লক্ষ্য ১১ জনে থাকা এবং ভালো খেলা।’
সুখবরটা বড় ভাই আল-আমিনকে সবার আগে জানিয়েছেন মারুফা। তার মাধ্যমে জেনেছে পুরো পরিবার। নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বাড়িতে বইছে আনন্দের বন্যা।
মারুফা বয়সভিত্তিক পর্যায় পেরিয়ে খেলার স্বপ্ন দেখতেন জাতীয় দলে। তার আগেই সুযোগ চলে এলো। বিসিবির অনুদান না পেলে করোনার প্রথম ওয়েভের সময় থমকে যেত স্বপ্ন। পাশে দাঁড়ানোর জন্য তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিসিবিকে।
করোনাকালে বাবা আলিমুল্লার সঙ্গে বর্গা নেয়া জমিতে হালচাষ করেছেন মারুফা। সেই ছবি ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে। বিসিবির আশ্বাসে নতুন করে শুরু করেন। বড় ভাই আল-আমিনের সঙ্গে পরিত্যক্ত রেললাইনের পাশে অনুশীলন চালিয়ে যান। করোনা পরিস্থিতি ভালো হলে বিকেএসপি খুললে চলে আসেন সাভারে। বছর না পেরোতেই হলেন জাতীয় দলের সদস্য। যেখানে এ তরুণীর সতীর্থ আইকন ক্রিকেটার জাহানারা-সালমা-রুমানারা।
মারুফার অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স: করোনা মহামারী শেষে ওয়ানডে ফরম্যাটের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে বাজিমাত করেন মারুফা। ডানহাতি সুইং পেসার বিকেএসপির হয়ে ১১ ম্যাচে ওভারপ্রতি ৩.২১ রান দিয়ে মোট ২৩ উইকেট নেন। এক ম্যাচেই নেন ৭ উইকেট। ডানহাতি এই পেসার জিতে নেন টুর্নামেন্টের ‘বেস্ট প্রমিজিং প্লেয়ার’-এর পুরস্কার। চলে আসেন জাতীয় দলের ক্যাম্পে। যেখানে সুযোগ পান ২৮ ক্রিকেটার। ফিটনেস টেস্টে তোলেন সর্বোচ্চ পয়েন্ট।
গত মাসে সিলেটে টি-টুয়েন্টি সংস্করণের জাতীয় লিগে দেখান আরও বড় চমক। টি-টুয়েন্টিতে তিনের কম (২.৭৬) ইকোনমিতে বোলিং করেন। ৭ ম্যাচে ১৩ উইকেট নিয়ে হন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শিকারি। সিলেট বিভাগের শিরোপা জয়ে রাখেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
বাংলাদেশ দল: নিগার সুলতানা জ্যোতি (অধিনায়ক), শারমিন আক্তার সুপ্তা, শামিমা সুলতানা, ফারজানা হক, রুমানা আহমেদ, রিতু মণি, লতা মণ্ডল, সালমা খাতুন, সোবহানা মোস্তারি, নাহিদা আকতার, মুর্শিদা খাতুন, জাহানারা আলম, ফাহিমা খাতুন, সানজিদা আকতার মেঘলা, মারুফা আক্তার।