• শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৪:০১ পূর্বাহ্ন
Headline
রাজশাহীর পুঠিয়ায় নানান আয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন পালন পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)কে স্বাগত জানিয়ে পুঠিয়ার বানেশ্বরে র‌্যালী পুঠিয়ায় কৃষকদের মাঝে গ্রীষ্মকালীন প্রণোদনার ও কৃষি উপকরণ বিতরণ স্যাংশন নিয়ে আ.লীগের একটা পশমও ছেড়া যাবে না: রাসিক মেয়র লিটন তানোরে মহিলা লীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত রাজশাহীর বাঘায় অপহরণের ৭৪ দিন পর স্কুলছাত্রী উদ্ধার বিএনপি নেতা দুলু ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নাটোরে ছিনতাই হওয়া স্বর্নালংকারসহ দুই যুবক আটক রাজশাহীর দুর্গাপুরে আলুর বাজার দর নিয়ন্ত্রণে উপজেলা প্রশাসনের অভিযান দুর্গাপুরে বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগীদের মাঝে চাল বিতরণ

রাজশাহীর বাঘায় স্ব-ঘোষিত মুক্তিযোদ্ধার তুঘলকি কান্ড – পর্ব-৪

Reporter Name
Update : মঙ্গলবার, ৩০ আগস্ট, ২০২২


বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধিঃ মুক্তিযোদ্ধাদের অবর্ননীয় ত্যাগ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পাওয়া এ দেশের স্বাধীনতা। সঙ্গত কারণেই মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি বাংলাদেশের সকল মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার জায়গাটি সবকিছুর উর্ধ্বে। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি এদেশের মানুষের ভালোবাসাকে কাজে লাগিয়ে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করে নিচ্ছে কিছু অসাধু মানুষ। নিজের আখের গুছিয়ে নিতে বদ্ধ পরিকর এসব ভূয়া মুক্তিযোদ্ধারা।

 

এসব নামধারী মুক্তিযোদ্ধার জলজ্যান্ত উদাহরণ যেন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার সরেরহাট কল্যাণী শিশু সদন নামের একটি এতিমখানা পরিচালক শামসুদ্দিন সরকার @ ডা.সমেশ। ধুরন্ধর এ পল্লি চিকিৎসক বাড়তি সুবিধা পেতে মুক্তিযুদ্ধ না করেও বনে গেছেন মুক্তিযোদ্ধা। নিজের অসীম দূর্নীতি ধামাচাপা দিতে এবং নানা সুবিধা ভোগ করতে এ যেন এক নিখুঁত ছদ্মবেশ। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় নাম না থাকা স্বঘোষিত এ মুক্তিযোদ্ধার দূর্নীতির তথ্য খুঁজতে গিয়ে বেড়িয়ে আসে নানা অপ্রীতিকর সত্য।

 

এ পর্বে দূর্নীতির তথ্য দিয়েই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। সরেরহাট এতিমখানার পরিচালক ডা.সমেশ পেশায় ছিলেন একজন পল্লী চিকিৎসক। হুট করেই নিজে ঘোষণা দিয়ে পুরোদস্তুর মুক্তিযোদ্ধা বনে যান তিনি। এখানেই ক্ষান্ত হননি, মুক্তিযোদ্ধার নাম ভাঙিয়ে নানা মহল থেকে সুবিধা আদায় করতে থাকেন চতুর এ পল্লী চিকিৎসক। চিকিৎসা পেশা বাদ দিয়ে শুরু করেন লাভজনক এতিমখানা বানিজ্য। এ বানিজ্যে লাভের পরিমাণ এতই ছিলো যে, কয়েক বছরের ব্যবধানেই একদম শূন্য থেকে কোটিপতিতে পরিনত হন ডা.সমেশ।

নামে বেনামে কিনতে থাকেন জায়গা সম্পত্তি। ফুলে-ফেঁপে উঠে ব্যাংকে মজুদকৃত অর্থের পরিমাণ। এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, কয়েকবছর আগেও অর্থকষ্টে জীবনযাপন করতেন ডা. সমেশ ও তার পরিবার। কিন্তু হঠাৎ করেই রহস্যজনক ভাবে অর্থ সম্পত্তি বাড়তে থাকে এই পরিবারটির। এদিকে তিনি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন কি না এ বিষয়ে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কথা হলে তারা সকলেই জানান ডা. সমেসকে কেউ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে দেখেননি।

এ বিষয়ে ডা. সমেশের বক্তব্য চাইলে তিনি বলেন, আমি মুক্তিযোদ্ধা। আমার যারা কমান্ডার ছিলেন তারা আমাকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে দেখেছেন। এসময় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের উদ্ধৃতি দিয়ে তাকে প্রতিবেদক বলেন, আপনাদের স্থানীয় কমান্ডাররাও আপনাকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে দেখেননি। এসময় ডা. সমেশ শহিদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর উপদেষ্টা উল্লেখ করে তার সাথে যোগাযোগ করতে বলে জানান, আমার মুক্তিযোদ্ধা সনদের বিষয়ে এই ব্যক্তি জানেন।

 

পরবর্তীতে শহিদুল ইসলাম নিজেই প্রতিবেদকের সাথে যোগাযোগ করেন। এ সময় তিনি নিজেকে মানবাধিকার কর্মী এবং সাংবাদিক বলে পরিচয় দেন। এ সময় ডা. সমেশের পূর্বে দেওয়া পরিচয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা ডা. সমেশ ভুল বলেছেন। তিনি হয়তো ভয়ে এ কাজ করেছেন। ভুয়া পরিচয় দিয়ে ডা. সমেশ অপরাধ করেছে কি না জানতে চাইলে শহিদুল ইসলাম বলেন, এই কাজটি করে সত্যিই ডা. সমেশ অপরাধ করেছেন। আমার নামে এমন মিথ্যা তথ্য কেন দেওয়া হল এ বিষয়ে আমি অবশ্যই ডাক্তার সমেশের সাথে কথা বলবো। অনুসন্ধানে জানা যায়, শামসুদ্দিন @ পল্লী চিকিৎসক সমেশ তিনি হরহামেশাই নিজের নামের সাথে বীর মুক্তিযোদ্ধা খেতাব ব্যাবহার করে মানুষের সহানুভূতি কে কাজে লাগাচ্ছে।

 

২০০৭ সালে তিনি সাদা মনের মানুষ সম্মাননা সনদ পেয়েছেন। সেখানেও তিনি মুক্তি যুদ্ধ শেষ করে এসে অসহায়দের নিয়ে ভেব এতিমখানা তৈরিকরেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা খেতাব ফুটিয়ে তুলেছেন। এতেই ক্ষান্ত হননি তিনি। শরেরহাট কল্যানী শিশু সদনের এ-ই পরিচালক ও তার দুই ছেলের অনিয়ম দূর্নীতি তুলে ধরে দৈনিক নাগরিক ভাবনা পত্রিকার অনুসন্ধানী সাংবাদিক দল। ধারাবাহিক তিনটি পর্ব প্রকাশের পর তার ছোট ছেলে শাহদোলা মনসুর বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেন পত্রিকাটির সম্পাদক সহ ৪ জন সাংবাদিকের নামে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন বাদির পিতা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। শামসুদ্দিন সরকার কখনো মুক্তি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি বা কেউ করতে দেখেনি এমন তথ্য জানিয়েছেন স্থানীয়রা। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধার সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব আলী বলেন, শামসুদ্দিন নামের কোন মুক্তিযোদ্ধা কে চিনি না বা তালিকায়ও এ-ই নামের কোন মুক্তিযোদ্ধা নেই। এ বিষয়ে বাঘা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা রয়েজ উদ্দিন জানান, শামসুদ্দিন @ সমেশ ডাক্তার নামে কেউ আমাদের সাথে যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেনি।

 

এমন কি কোন তালিকায় এ-ই নাম নেই। উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা নাফিজ শরীফ বলেন, আমরা শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের গৃহনিবাসের বিষয়টা দেখি বাকি সব বিষয়গুলো সোনালী ব্যাংক, ইউএনও, ডিসি এবং মুক্তিযোদ্ধা অফিস দেখে। তাছাড়া কে মুক্তিযোদ্ধা না সেটা আমরা দেখি না। সোনালী ব্যাংক ম্যানেজার বলেন ব্যাংক শুধু ভাতা পাওয়া না পাওয়ার বিষয়টা দেখে। কিন্তু কে মুক্তিযোদ্ধা আর কে মুক্তিযোদ্ধা না সেটা দেখেন ইউএনও, ডিসি। কেউ ভাতার জন্য আবেদন করলে সফটওয়্যারের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করা হয়‌।

 

ডাক্তার সমেশ এর বিষয় তিনি বলেন তার নাম ঠিকানা দিয়ে যান আমরা বিষয়টা দেখবো। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা বলেন, হঠাৎ করে বললে আমার পক্ষে একজনের বিষয়ে জানানো সম্ভব না। কারণ অনেক মুক্তিযোদ্ধা আছে ফাইল দেখ তারপর বলা যাবে। তবে মুক্তিযুদ্ধ না করেই কেউ নামের সাথে বীর মুক্তিযোদ্ধা লিখতে পারবে না। উল্লেখ্য, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা এ মামলায় প্রথম নয়। তাদের অনিয়ম দূর্ণীতির বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই মামলার হুমকি দেন। তাই ভয়ে এলাকার কেউ মুখ খোলে না।

 

২০১৫ সালে বাঘা উপজেলার এক সমাজ সেবা কর্মকর্তা তাদের অনিয়ম দূর্নীতি দেখে ক্যাপিটেশন বন্ধ করলে তার বিরুদ্ধে জামায়াত শিবির তকমা দিয়ে করা হয় অভিযোগ। আগামী পর্বে সমাজ সেবা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কি কারনে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন শামসুদ্দিন সরকার তার বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Recent Comments

No comments to show.