দরকষাকষি করে ঘুষ নেন শিক্ষা কর্মকর্তা!

বিডি নিউজ২৩: নীলফামারীর ডিমলায় উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ নিজ অফিসে বসেই প্রকাশ্যে ঘুষ নেন। সম্প্রতি উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বরাদ্দের টাকা নিজের ব্যাংক হিসাবে রেখে তা ছাড় করতে ঘুষ আদায়ের নতুন এক কৌশল নেন তিনি। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই ঘুষ লেনদেনের একটি ভিডিও ছড়িয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, নুর মোহাম্মদ ঘুষের টাকা নিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে দর-কষাকষি করছেন।

 

পরে সে টাকা গুনে গুনে নিজের প্যান্টের পকেটে রাখছেন। ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে অনুসন্ধানে নেমে জানা যায়, চলতি বছর উপজেলার ৮৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় মেরামতে বরাদ্দ এসেছে দুই লাখ টাকা করে মোট ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। রুটিন মেইনটেন্যান্স বাবদ ৯৯টি বিদ্যালয় পেয়েছে ৪০ হাজার টাকা করে মোট ৩৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা আর স্লিপ বাবদ ৮৬ লাখ ৮০ হাজারে ৪০ হাজার টাকা করে পেয়েছে ২১৭ প্রাথমিক বিদ্যালয়। এসব টাকা চলতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের হিসাব নম্বরে পাঠানোর কথা ছিল। বরাদ্দের টাকা শিক্ষা কর্মকর্তার হিসাব নম্বরে আসার তিন দিনের মধ্যে সব বিদ্যালয়ের হিসাব নম্বরে স্থানান্তরের সরকারি নির্দেশে উল্লেখ করা ছিল। কিন্তু নুর মোহাম্মদ সরকারি কোনো নিয়ম মানেননি। তিনি ৩০ জুনের মধ্যে একটি বিদ্যালয়ের টাকাও ছাড় না করে সব টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে রেখে দেন। টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে নেওয়ার পর প্রধান শিক্ষকদের খবর দিয়েছেন টাকা তুলে নেওয়ার জন্য। তবে এ ক্ষেত্রে তিনি শর্ত দেন, মেরামত কাজের জন্য ৮৮টি বিদ্যালয়কে ১২ থেকে ২০ হাজার করে উৎকোচ দিতে হবে।

 

পাশাপাশি টাকার চেকের জন্য বিদ্যালয়প্রতি ৫ হাজার, রুটিন মেইনটেন্যান্স চেকপ্রাপ্তির জন্য বিদ্যালয়প্রতি ৬ হাজার করে টাকা দিতে হবে। পরে সব স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা সর্বমোট ২০ লাখ টাকা তাকে দেন কয়েক দফায়।

তবে যেসব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা এই ঘুষের টাকা দিয়েছেন তারা কেউ প্রকাশ্যে আসতে চাইছেন না। ঘুষ দেওয়া বা নেওয়া যা একই অপরাধের শামিল বিধায় তারা ঘটনাটি এখন ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিমলা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলা ট্রেজারি ও অডিট শাখায় টাকা ছাড়া কাজ করে না। ফলে স্কুলগুলোর প্রধান শিক্ষকদের কাছ থেকে ওই টাকা নিতে হয়। এ টাকা তো আমি আমার বেতন থেকে দিতে পারব না।

 

বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নবেজ উদ্দিন সরকার দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমি ওই উপজেলার স্কুলগুলোর প্রধান শিক্ষকদের কাছে লিখিত অভিযোগ চেয়েছি। তবে সোমবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত তারা কোনো লিখিত অভিযোগ দেননি। তবে একটি ভিডিও হাতে এসেছে। ওই ভিডিওর সূত্র ধরে ডিমলা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার ঘুষ গ্রহণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। (সুত্র: দেশ রুপান্তর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *