বিডি নিউজ২৩: জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৫ আগস্টে কারবালার থেকেও জঘন্য হত্যাকাণ্ড ঘটে। আমার শুধু একটা প্রশ্নই জাগে মনে, আমার বাবা-মা-ভাইয়েরা কী অপরাধটা করেছিল? কেন এভাবে হত্যা করা হলো? তিনি বলেন, ‘শূন্য হাতে একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ এবং একটা প্রদেশ—তাকে রাষ্ট্রে উন্নীত করা এবং এই বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলা। হাতে সময় পেলেন মাত্র সাড়ে তিন বছর। কোনও সম্পদ ছিল না।
রবিবার (১৪ আগস্ট) আওয়ামী লীগের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তিনি (বঙ্গবন্ধু) শুধু একটা কথাই বলেছিলেন, মাটি আর মানুষ হচ্ছে আমার সম্পদ। এই মাটি আর মানুষের ওপর নির্ভর করেই কিন্তু তিনি সাড়ে তিন বছরের মধ্যেই সেই বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তুলে স্বল্পোন্নত দেশে উন্নীত করে দিয়ে যান। তাঁর লক্ষ্যটা ছিল যে ঘুণে ধরা সমাজ ভেঙে একটা নতুন সমাজ দেবেন। এই ঔপনিবেশিক আমলের যে প্রশাসনিক কাঠামো, সেটা ভেঙে গণমুখী প্রশাসনিক কাঠামো তিনি করতে চেয়েছিলেন। গণমুখী প্রশাসনিক কাঠামো করার জন্য একটা বিরাট পরিবর্তন তিনি আনতে চেয়েছিলেন। এই গণমুখী প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তুলে ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণ করে, তিনি তৃণমূলের মানুষের কাছে ক্ষমতা দিতে চেয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ‘যে জন্য বাংলাদেশটাকে প্রত্যেকটা মহকুমাকে জেলায় রূপান্তর করলেন এবং একেকটা জেলার উন্নয়নটা যাতে ওই জেলার ভিত্তিতে হয়, যাতে মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দূর হয়, আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়—সেই পদক্ষেপটাই তিনি নিলেন এবং দ্বিতীয় বিপ্লবের যে ডাকটা দিলেন, সেটার লক্ষ্যই ছিল জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা। উৎপাদন বৃদ্ধি করা, আর্থ-সামাজিক উন্নতি করা। মনে হয় যেন, এই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কেউ যদি কোনও অবদান রাখতে যায়, তাঁকে বোধহয় বিপর্যয়ে পড়তে হয়।
এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। এটাই হচ্ছে আমাদের জন্য সব থেকে দুর্ভাগ্যের যে যখনই এই দেশের মানুষ একটু ভালো থাকে, ভালো অবস্থায় আসে, তখনই চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রটা শুরু হয়।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘একটা শ্রেণি সবসময় রয়ে গেছে এই দেশে, যারা এই দেশের মানুষের কল্যাণ হোক এটা চায় না। অর্থাৎ স্বাধীনতাটা অর্থবহ হোক, স্বাধীনতার সুফল বাংলার মানুষের কাছে পৌঁছাক, এখানে একটা বাধা দেওয়ার প্রচেষ্টা সবসময় আমরা দেখি। সেই জন্য যখনই মানুষ একটু ভালো থাকে তখনই এই সংগঠনের মাধ্যমেই তো আমরা কাজ করি। আমাদের যেকোনও দুযোগ-দুর্বিপাক যাই আসুক, আওয়ামী লীগের বা আমাদের সহযোগী সংগঠন সবসময় তারা কিন্তু সজাগ থাকে এবং মানুষের পাশে সবার আগে দাঁড়ায়।
এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। সেই সংগঠনকে সুসংহত করা, এটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য।
১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কার ঘটনা বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের যখন মেয়াদকাল শেষ হয়ে যায়, তখন আমরা কিন্তু ক্ষমতা হস্তান্তর করে চলে আসি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এ পর্যন্ত আর কখনোই ক্ষমতার পরিবর্তন এভাবে হয়নি শান্তিপূর্ণভাবে। প্রতিবারই কিন্তু একেকটা ঘটনার মধ্য দিয়ে ঘটেছে। এটা কিন্তু সবার একটু মাথায় রাখতে হবে। কারণ, আওয়ামী লীগ সবসময় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, নীতিতে বিশ্বাস করে। জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাস করে। সেই জন্যই ওই একবারই, তারপরের ঘটনা তো সবাই জানে।
তিনি বলেন, ‘২০০১-এর নির্বাচন। সেই সময়ে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার। মানুষ খুন করা, সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার। সেখানে হিন্দু-খ্রিষ্টান কেউ বাদ যায়নি। ২০০১ সালের নির্বাচনের যে চিত্র, সেই চিত্র সবার মনে আছে। তারপরে বিএনপি-জামায়াত এসে বাংলাদেশকে পাঁচ-পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, বোমা হামলা। ১৫ আগস্টের খুনিদের জিয়াউর রহমান যে শুধু ইনডেমনিটি দিয়ে, মাফ করে দিয়ে, পুরস্কৃত করেছে তা তো না। এরশাদ এসে খুনি ফারুককে প্রেসিডেন্ট ক্যান্ডিডেট করলো। খালেদা জিয়া এসে আরও একধাপ ওপরে। রশিদ-ফারুক-হুদা তিন জনকে নমিনেশন। ফারুককে জেতাতে চেষ্টা করেছিল, কিন্তু সেটা পারে নাই।
হুদা আর রশিদকে জিতিয়ে পার্লামেন্টে বসালো। খুনি রশিদকে পার্লামেন্টের লিডার অব অপজিশনে বসালো। তার মানে এই দেশে খুনিদের সৌহার্দ্যটা কত—এটা জনগণের জানা উচিত। সেই খুনিদের তারা পুরস্কৃত করার মানে কী? ১৫ আগস্ট হত্যার সঙ্গে এদের যে সম্পৃক্ততা, জিয়াউর রহমানের সম্পৃক্ততা, ইনডেমনিটি দিয়ে তাদের বিচার হবে না। আমরা যারা ১৫ আগস্ট আপনজন হারিয়েছি, আমাদের তো বিচার চাওয়ার অধিকার ছিল না। মামলা করার অধিকার ছিল না, তাদের পুরস্কৃত করা হয়েছে। অর্থাৎ বিচারহীনতার একটা সংস্কৃতি এ দেশে চালু করে দিয়েছিল। যেখানে তুমি কোনও দিন ন্যায়বিচার চাইতেই পারবে না। খুব ইয়ে লাগে যখন কেউ মারা গেলে, আমার কাছে বিচার চায়। কারণ, আমার তো বিচার পেতে ৩৫ বছর সময় লাগছে। আমার বাপ, মা, ভাই সব হারানোর পরে বিচার চাইতে পারিনি।’
মানুষের সেবায় আওয়ামী লীগ সরকার সবসময় অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘ফলে জনগণের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি। তারা আমাদের বারবার ভোট দিয়েছে, তাই টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় আছি।
দারিদ্র্যের হার কমেছে, পুষ্টি নিশ্চয়তাসহ মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমার লক্ষ্য, এই দেশে আমার আব্বাই শুরু করেছিলেন, ভূমিহীনদের মাঝে জমি দেওয়া এবং ঘর করে দেওয়া। সেটাই আমি সম্পূর্ণভাবে করতে চাই। আশ্রয়ণ নাম দিয়ে সেটা করে যাচ্ছি। ফলে বাংলাদেশে আগামীতে একটি মানুষও ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না। তিনি বলেন, ‘আমার আব্বা তো সারা জীবন এই দেশের মানুষের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে গেছেন। শেষ পর্যন্ত জীবনটাই দিয়ে গেছেন। একটা মানুষ ঘর পাওয়ার পরে তার মুখের হাসি ও তৃপ্তিটা মনে হয় আমার বাবা বেহেশত থেকে দেখেন। তার মনটাও নিশ্চয়ই তৃপ্ত হয় যে দেশের মানুষ কিছু পাচ্ছে।