• শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:১৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম
রাজশাহীতে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, পদত্যাগ দাবি রাজশাহীর বাগমারায় বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করেছে র‌্যাব-৫ ঘুষকাণ্ডে দালালির দায়ে সাসপেন্ড হিটলার মার খেয়ে মামলা করে আপোসও করে তিনিই! পুঠিয়ায় ট্যাপেন্টাডল সহ ২ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভা পুঠিয়ায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পুকুরে মাছ শিকার! প্রতিহিংসার রাজনীতি নয়, দলীয় ঐক্য গড়ুন: আরিফ-শাকিল বাগমারায় আ.লীগ নেতা ও ক্যাডার আক্কাস আলী মাস্টার গ্রেফতার দখলদার হিটলার-বুলবুল গংদের আড়াই মাসে কয়েক লক্ষ টাকা ঘাপলা রাজশাহী বাঘায় গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ

ভারতে বসবাস, বাংলাদেশে চাকরি, বেতন নেন কৌশলে

সংবাদদাতা:
সংবাদ প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৯ আগস্ট, ২০২২
BD News23
ভারতে বসবাস, বাংলাদেশে চাকরি, বেতন নেন কৌশলে

Kiবিডি নিউজ২৩/BD News23: প্রায় ৫ বছর আগে বসবাসের উদ্দেশ্যে ভারতে বাড়ি করে বসবাস শুরু করেছেন পাবনার বেড়া উপজেলার মাশুন্দিয়া-ভবানীপুর কে.জে.বি ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক বিশ্বনাথ দত্ত। স্ত্রী সন্তানসহ সপরিবারে বসবাস করছেন ভারতের কলকাতায়। গত বছর ধরে কোন প্রকার হাজিরাই দিচ্ছেন না চাকরিরত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। অথচ বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সকল সুবিধাই ভোগ করে চলেছেন বিশ্বনাথ দত্ত।

 

অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মন্নাফ সরকার বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন।

 

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গণিত বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক বিশ্বনাথ দত্ত প্রায় ৫ বছর আগে সপরিবারে ভারতে চলে যান। মাঝেমধ্যে তিনি ভারত থেকে দেশে এসে কলেজে হাজিরা দিয়ে যান। তবে অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে গত এক বছরের অধিক সময় ধরে বিনা ছুটিতে ভারতে অবস্থান করায় তার স্বাক্ষর জাল করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুস ছালাম বিশ্বাস ও বিশ্বনাথ দত্তের ভাই সুনিল দত্তের যোগসাজসে নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন।

 

বিশ্বনাথ দত্তের চাকরির ইনডেক্স নং-৪০৩৩৮৪, সোনালী ব্যাংক, বেড়া শাখা, পাবনার ব্যাংক হিসাব নং-০০২০৬৩২৫১। যা ব্যাংকে গিয়ে খোঁজ নিয়ে সত্যতা মিলেছে।

 

লিখিত অভিযোগের অনুলিপি থেকে জানা যায়, বিশ্বনাথ দত্ত তার বড় ভাই সুনিল দত্তের কাছে ব্যাংকের চেকবই স্বাক্ষর করে রেখে গেছেন। প্রতি মাসে বেতন বইতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিজেই বিশ্বনাথ দত্তের নামের ঘরে স্বাক্ষর করে বেতন ব্যাংক হিসাবে জমা করার পরে বিশ্বনাথ দত্তের ভাই সুনিল দত্তকে দিয়ে ব্যাংক থেকে সমুদয় টাকা (মাসিক ৪০,৩৫৩/-) উত্তোলন করিয়ে নিয়ে অর্ধেক টাকা নিজে নিয়ে নেন। এছাড়া কলেজ অংশের মাসিক বেতনের (১৯৪৮/-) পুরোটাই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুস ছালাম বিশ্বাস জাল স্বাক্ষর করে আত্মসাৎ করেন। বেতনের অর্থ গ্রহণের বিনিময়ে ভারতে অবস্থান করেও বাংলাদেশে চাকরি করাকে সহজ করে দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।

 

কোনো কাজ না করেই বেতনভাতা তুলে নিচ্ছেন বছরের পর বছর। ভোগ করছেন সরকারের উৎসবভাতা ও বোনাসসহ সুবিধাদি। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

 

অভিযোগকারী শিক্ষক মন্নাফ সরকারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি পুরো ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘বিশ্বনাথ দত্ত বহুদিন ধরে সপরিবারে ভারতে থাকেন। একবছর হলো তিনি কলেজে আসেন না। অথচ কলেজ থেকে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন ঠিকমতোই। হাজিরা খাতায় লাল কালি দিয়ে অনুপস্থিত লেখা আছে। বিভিন্ন অজুহাতে অনুপস্থিত দেখানো হয় প্রায় এক বছর ধরে। বিশ্বনাথ দত্তের বেতনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুস ছালাম বিশ্বাস নিজেই তার স্বাক্ষর দিয়ে দেন। আর আমরা শুনেছি বিশ্বনাথ তার ভাইয়ের কাছে সোনালী ব্যাংকের চেক বইয়ে স্বাক্ষর করে রেখে গেছেন এবং তিনি ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করেন।’

 

অভিযোগের বিষয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুস ছালাম বিশ্বাসের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। একপর্য ায়ে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে বিভিন্ন অজুহাতে প্রতিবেদকের সাথে কথা বলতে রাজী হননি। একবার ফোন ধরে বলেন, আমি মিটিংয়ে আছি পরে কথা বলছি। পরে ফোন দিলে বলেন, আমি গাড়িতে আছি পরে কথা বলছি। তবে তার পক্ষে সুপারিশের জন্য স্থানীয় কয়েকজন নেতা এ প্রতিবেদককে মুঠেফোনে প্রতিবেদন না লেখার কথা বলেন।

 

সোনালী ব্যাংক বেড়া শাখায় সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বিশ্বনাথ দত্তের প্রতি মাসের বেতন প্রতি মাসেই একাউন্টে জমা হচ্ছে এবং তা উত্তোলনও হচ্ছে।

 

এ ব্যাপারে কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আব্দুল আজিজ খানের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি ঐ কলেজের নতুন সভাপতি হয়েছি। তবে বিশ্বনাথের বিষয়ে শুনেছি তিনি অসুস্থতার অজুহাতে ভারতে থাকেন। আমি সভাপতি হবার পর কলেজে তিন চারটি মিটিং করেছি। তার সাথে আমার একবারও দেখা হয়নি। এবার আমি কলেজে লাস্ট ওয়ার্নিং দিয়ে ১৫ আগস্ট তাকে উপস্থিত থাকার কথা বলেছি। এর আগেই আমি মিটিং ডাকবো। এরপরেও ১৫ আগস্টে যদি উপস্থিত না হন তাহলে আমি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব এবং যারা তাকে এই অবৈধকাজে সহায়তা করছেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরও বলেন, আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি বিশ্বনাথ দত্তের ভাইকে দিয়ে তার বেতন উত্তোলন করা হচ্ছে।’

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কলেজের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, ‘কলেজের অধ্যক্ষ এবং পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির স্বাক্ষর ছাড়া বেতনই হয় না। তাহলে কীভাবে এতদিন বিশ্বনাথ দত্তের বেতন হয়? এই দুর্নীতিতে সবারই হাত আছে। এর চেয়েও বড় বিষয় হল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী কোন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এক বছরের বেশি থাকার নিয়ম নেই। অথচ আব্দুস ছালাম বিশ্বাস বিগত তিন বছর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

 

এ বিষয়ে জানার জন্য সহকারী অধ্যাপক বিশ্বনাথ দত্ত ও তার ভাই সুনিল দত্তের সঙ্গে কোনভাবেই যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

 

বেড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. খবির উদ্দিন বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার জানা ছিল না। তবে কলেজে ছুটি ছাড়া বহুদিন কলেজে অনুপস্থিত থেকে তিনি বেতন তুলতে পারেন না। এক বছর তো ছুটিতে থাকতেই পারেন না। আর মেডিকেল ছুটি নিলেও তো বেতন নিতে পারবেন না। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।’

 

বেড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সবুর আলী বলেন, ‘এই বিষয়ে আমি অবগত নই। তবে এটা কোন নিয়মের মধ্যে পড়ে না। অভিযোগ বা কোন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে তদন্ত করে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর

Recent Comments

No comments to show.