বিডি নিউজ২৩/BD News23: কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার এই সৈনিক এখনও যত্ন করে রেখেছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পরিহিত তার পোশাক এবং প্রয়োজনীয় নানা কাগজপত্র। সযত্নে রাখা সেই পোশাকে এখনও ঝুলছে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন র্যাঙ্ক ও ব্যাজ। সম্প্রতি দেশের একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে আব্দুল মান্নানের জীবনের গল্প।
প্রকাশিত হওয়া সেই প্রতিবেদনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার স্মৃতিচারণ করেন আব্দুল মান্নান। তিনি জানান, ১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তাতে সৈনিক হিসেবে অংশ নিতে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন মান্নান। লাইনে থাকা সকলই বুকে ব্রিটিশ সেনাদের থাপ্পড় খেয়ে পড়ে গেলেও ইস্পাতের মতো শক্ত হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। যা দেখে মুগ্ধ হয়ে যায় সেনা বাছাইয়ে অংশ নেয়া ব্রিটিশ সেনার দল। এরপরই যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য ট্রেনিংয়ে ডাক পান মান্নান। মান্নান জানান, সেখানে এক মাসের মতো ট্রেনিং করেন তিনি। ট্রেনিংয়ে স্কোর ভালো থাকায় সেখানেই অফিসার হিসেবে প্রমোশন পান তিনি। এছাড়া ট্রেনিংয়ে বিশেষ দক্ষতার জন্য পেয়ে যান ল্যান্সনায়েকের দায়িত্বও।
পরে যুদ্ধে যোগ দেন এই অকুতোভয় সৈনিক। যুদ্ধে যোগ দিয়ে প্রথমেই দায়িত্ব পড়ে অ্যাটলান্টিক মহাসাগরে ভেসে থাকা যুদ্ধজাহাজে। জাহাজে ভেসে কলম্বো থেকে পাকিস্তান, হিমালয়সহ পুরো ভারতবর্ষ যুদ্ধ করে বেড়াতে হয়েছে তাকে। মিয়ানমারে ক্যাম্প করার পর খবর আসে হিরোশিমায় ঘটে গেছে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে জঘন্য পারমাণবিক হামলা। এরপরই ইংল্যান্ড ফিরতে শুরু করে ব্রিটিশ অফিসাররা। মান্নানের ভাষায়, হিরোশিমার সেই হামলার পর যুদ্ধ আসলে শেষ হয়ে যায়। আর যুদ্ধ শেষ হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যেই ভারত উপমহাদেশে ভারতীয় অফিসারদের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করে ইংল্যান্ড ফিরে যান সকল ব্রিটিশ অফিসার। অর্থাৎ, উপমহাদেশ থেকে এক প্রকার পালিয়ে যান ব্রিটিশ সেনা অফিসাররা।
এরপর মাত্র ৫০০টাকা হাতে ধরিয়ে হায়দ্রাবাদ থেকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয় আব্দুল মান্নানকে। বিশ্বযুদ্ধের ময়দানে এলএমজি নিয়ে ঘুরে বেড়ালেও কাউকেই সরাসরি হত্যা করেননি আব্দুল মান্নান। তবে যুদ্ধে যোগ দেয়ার আগে তাকে কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল বলে সেই বেসরকারি টেলিভিশনকে জানান মান্নান। তার ভাষায় নির্দেশনাগুলো ছিল, কারও মুখে থাপ্পড় মারা যাবে না, কারও অর্থ কিংবা মালামাল লুট করা যাবে না, নারী নির্যাতন করা যাবে না, মিথ্যা বলা যাবে না। এদিকে, যুদ্ধ জয়ের আনন্দ বুকে নিয়ে বেড়ালেও সৈনিক হিসেবে পাননি তার প্রাপ্য মূল্য। তাই মনের এক কোণে রয়েছে কিছু হতাশাও। তাই নিজের পাওনা টাকা পেতে ব্রিটিশ রানী বরাবর দরখাস্ত লিখেন এই প্রাক্তন সৈনিক।
পরে এরশাদ সরকারের আমলে ব্রিটিশ হাইকমিশনের মাধ্যমে কিছু টাকা পান তিনি। কিন্তু এরশাদের আটক হলে আটকে যায় আব্দুল মান্নানের টাকাও। দীর্ঘ বিরতির পর সম্প্রতি আবারও শুরু হয়েছে মান্নানের নিয়মিত ভাতা। মাসে ৮ হাজার টাকা হিসেবে তিন মাসে মোট ৩২ হাজার টাকা হাতে পেয়েছেন তিনি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এতবছর পরও ব্রিটিশ সরকারের কাছে এখনও ভাতা পেয়ে যাচ্ছেন একসময়ের অকুতোভয় এই সেনা। যদিও এই টাকা বর্তমান বাজারে অতি নগণ্য। শতবর্ষী আব্দুল মান্নান বাংলা ও ইংরেজীতে কথা বলতে পারেন সাবলীল ভাবেই। এই বয়সেও কোনো প্রকার অসুখ ছাড়াই দিন কাটছে তার।