হাবিল উদ্দিন,বাঘা, রাজশাহী: রাজশাহীতে চলতি বছর পাটের বাম্পার ফলন হলেও কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি না হওয়ায় খেতেই শুকিয়ে নষ্ট হচ্ছে পাট গাছ। অন্যান্য বারের তুলনায় এ বছর পুরো রাজশাহী জেলা জুড়ে পাটের ব্যাপক ফলন হয়েছে। একাধিকবার সেচ দিয়েও ক্ষেত বাঁচাতে পারছেন না চাষিরা। আষাঢ়-শ্রাবণে বর্ষার পুরো মৌসুম হলেও এ বছর এখনো কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির দেখা মেলেনি। মাঠঘাটসহ চারদিক শুকিয়ে গেছে। ফলে ক্ষরায় পাটগাছের পাতা শুকিয়ে কুচকে যাচ্ছে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মধ্যে। এছাড়াও ব্যাপক ক্ষতির মুখে রয়েছে দুর্গাপুর উপজেলা উঠিয়া উপজেলা তানোর উপজেলা গোদাগাড়ী উপজেলা সহ রাজশাহী জেলার উপজেলা। বাঘা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় এবার ৪ হাজার ৫৬৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে।গত বছর ৩ হাজার ৩৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছিল।
বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামের বর্গাচাষি সাজদুল ইসলাম তিন বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন। কিন্তু অনাবৃষ্টি আর প্রচণ্ড খরতাপের কারণে তাঁর জমির পাটগাছ খর্বাকৃতির হয়ে আছে। গরমে তাঁর জমির বেশির ভাগ পাটগাছ পুড়ে মরে যাচ্ছে। তিনি বলেন, জমি বর্গা নিয়ে পাট চাষ করতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত জানুয়ারি থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত মাত্র ৩১১ দশমিক ১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ বছর বৃষ্টির মৌসুম পার হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বৃষ্টি হয়েছে খুবই কম। শাহ কৃষি তথ্য পাঠাগার ও জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা জাহাঙ্গীর শাহ দৈনিক বৃষ্টিপাতের হিসাব রাখেন। তাঁর হিসাবমতে, রাজশাহীতে ২০২০ সালের আষাঢ় মাসে ২১ দিন, ২০২১ সালে ১৯ দিন আর এবারের আষাঢ়ে মাত্র ১১ দিন বৃষ্টি হয়েছে। তা–ও পরিমাণে কম। এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন পাটচাষিরা।
রোববার (১৭ জুলাই) উপজেলার বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, পাটগাছগুলো শুকিয়ে মরে যেতে লেগেছে। এরই মধ্যে যেসব জমিতে বেলে মাটির পরিমাণ বেশি সেসব খেতের পাটগাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। এতে দুশ্চিন্তায় আছেন চাষিরা। শুধু তাই নয়,পাট কাটা শুরু হয়েছে। ভরা মৌসুমে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় খালবিল, ডোবা, নালায় পানি জমেনি। ফলে পাট কেটে জাগ দেওয়া নিয়েও চিন্তায় রয়েছেন তাঁরা। কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওনা নিয়ে শঙ্কার মধ্যে দিন কাটছে তাঁদের।
কৃষকেরা জানান, বেশ কয়েক দিন ধরে থেমে থেমে আকাশে মেঘ জমছে। এরপর কয়েক ফোটা বৃষ্টি পড়ে মেঘ সরে যাচ্ছে। তা ছাড়া এখন চৈত্র মাসের মতো রোদ ও গরম পড়ছে। বৃষ্টি না হওয়ায় একদিকে যেমন মাঠে পাটগাছ শুকিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির দেখা না মেলায় আমন চাষ নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। আমনের বীজতলা তৈরি হলেও বৃষ্টির অভাবে চারা খেতে রোপণ করা যাচ্ছে না।
বাঘা কৃষি সম্প্রসারন অফিসার কামরুল ইসলাম বলেন,অতি ক্ষরায় এ মৌসূমে ৭ হেক্টর জমিতে পাট ক্ষতি সাধিত হয়েছে। বৃষ্টি না হলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনাবৃষ্টি ও খরার কারণে এই সমস্যা।খরার কারণে পাটে ‘মাইট’ নামের এক ধরনের পোকার উপদ্রব হয়েছে। এখন পাটের জন্য জোরে বৃষ্টি দরকার। এ ছাড়া খরার কারণেও এবার পাট বাড়তে পারেনি। যাঁদের জমিতে পাট ভালো আছে, তাঁরাও জাগ দেওয়ার পানি নিয়ে সংকটে পড়বেন। সেচের পানিতে পাট জাগ দিতে চাষিদের অনেক বেশি টাকা খরচ হয়ে যাবে।