• মঙ্গলবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ০৪:০৭ অপরাহ্ন
Headline
সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরে পুঠিয়া দুর্গাপুরে গনসংযোগ করলেন মুনি পুঠিয়ার ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলো যেনো ঘুষের স্বর্গ রাজ্য, ছাড় পায় না ভিক্ষুকও রংপুরে উইঘুর মুসলিম নির্যাতন ও চীনের আগ্রাসন বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন নরসিংদীতে পরিক্ষা শেষে আর বাড়ি ফেরা হলো না এক এইচএসসি পরিক্ষার্থীর ফ্রিল্যান্সারদের ওপর কোনো কর আরোপ করা হয়নি: জুনাইদ আহমেদ পলক বাগমারায় এক আনসার ও তার ভাতিজা হেলালের অত্যাচারে অতিষ্ঠ গ্রামবাসি বিদেশ যেতে হলে খালেদা জিয়াকে আবার জেলে যেতে হবে, কোর্টে যেতে হবে হোটেলে ভাত খেয়ে ৩ লাখ টাকা বিল বাকি ছাত্রলীগ নেতার, থানায় অভিযোগ পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে ঈদে মিলাদুন্নবীর জশনে জুলুসে বোমা হামলায় ৫০ অধিক নিহত প্রদেশটিতে ৩ দিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে। নিহতের সংখ্যা আরো অনেক বাড়তে পারে…. রাজশাহীর পুঠিয়ায় নানান আয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন পালন

স্বার্থক জীবনের গল্প,অগ্নিসৈনিক মিজানুর রহমান

Reporter Name
Update : সোমবার, ২৭ জুন, ২০২২
বিডি নিউজ২৩
স্বার্থক জীবনের গল্প,অগ্নিসৈনিক মিজানুর রহমান

বিডি নিউজ২৩: জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর থানার হলহলিয়া নামক গ্রামে তখন তাদের বসবাস। তার বয়স যখন পাঁচ বছর। বাবা-মা আর ছোট বোনসহ চার সদস্যের ছোট্ট সংসার তাদের। যে সংসারে ছিল না কোন দুঃখের কষাঘাত, ছিল না কোন অশান্তির ছোঁয়াইব । বড় ছেলে মিজানুর রহমান ও ছোট মেয়েকে নিয়ে বাবা-মায়ের সংসার নামের ছোট্ট প্রদীপটি হাস্যোজ্জল চেহারা নিয়ে যেন জ্বল জ্বল করছিল। ঠিক সে সময়ের একটি দিন। সকালের সূর্য্য তখনও তার নিজ রশ্মিমালা নিয়ে পূর্ব দিগন্তে উঁকি দেয়নি। মা চুলায় ধান সেদ্ধ করছিলেন। 

 

শীতের সকালে হাতে তুথব্রাশ নিয়ে ছোট্ট মিজানুর রহমান চুলার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন আগুনের একটু উষ্ণতা গ্রহণের জন্য। আগুন নিয়ে খেলতে স্বভাবতই শিশুদের ভালো লাগে। আগুনের প্রতি শিশুদের আকর্ষণের শেষ নেই। পিপাশা নিবারনের জন্য মা ঘরে গেলে সেই সুযোগে চুলার সামনে গিয়ে বসেছিলেন তিনি। আর খেলার ছলে না বুঝেই আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন তার ফিছনে থাকা শরিষার শুকনো গাছে।

 

প্রাথমিকভাবে স্থানীয় লোকজন কর্তৃক অগ্নিনির্বাপনের চেষ্টা করার পরেও যখন তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন খবর দেওয়া হয় ফায়ার সার্ভিসকে। জয়পুরহাট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের একদল দক্ষ কর্মী অতি দ্রুত ঘটনাস্থলে আসার চেষ্টা করলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত হওয়ায় এবং নদী পারাপারের ব্যবস্থা না থাকায় তাদের বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে আটকে যায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি। ততখনে আগুনের ছোবলে ভস্মীভূত হয়ে যায় তাদের বাড়িসহ আশে পাশের আরও দু-তিনটি বাড়ির অংশবিশেষ। সেদিন নিঃস্ব হয়ে যায় মিজানুর রহমানের পরিবার। প্রায় পথেই বসে কিছুদিন আগেও হাসিখুশি থাকা পরিবারটি।

 

গ্রামছাড়া হতে হয় বাব-মা কে। বাবার ভিটা, নিজ গ্রাম, নিজের হাতে তিল তিল করে গড়ে তোলা সোনার সংসারের মায়া ত্যাগ করে মা ছোট বোন ও তাকে নিয়ে বাবাকে পারি জমাতে হয় অচিনপুরে। তাদেরকে নিয়ে বাবা বসবাস শুরু করেন বগুড়া জেলার দুপচাঁচিয়া থানার উনাহত সিংড়া নামক গ্রামে। তখন মিজানুর রহমানের বড়আব্বু অর্থাৎ বাবার বড় ভাই (মোঃ আব্দুল খালেক) বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগের একজন গর্বিত সদস্য। 

 

তাঁর উৎসাহে সেই ছোটবেলা থেকেই মিজানুর রহমান বুকে লালন করেছিলেন এক সফল স্বপ্ন। বুদ্ধি হবার পর নিজের হাতের দিকে তাকালেই তার মনে পরতো, এই হাত তাদেরকে নিঃস্ব করে দিয়েছে। এই হাত দিয়ে তিনি তার নিজের ভবিষ্যত জ্বালিয়ে দিয়েছেন। যে হাত দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে তিনি তার পরিবারকে নিঃস্ব করেছেন, বড় হয়ে সেই হাত দিয়ে আগুন নিভিয়ে এরকম হাজারও পরিবারকে এই নিঃস্বঙ্গতার হাত থেকে রক্ষা করবেন তিনি। বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগের সদস্য তালিকায় নিজের নাম লিখিয়ে সারা জীবন কাজ করে যাবেন দেশ ও আর্তমানবতার সেবায় – এই সফল স্বপ্নকে জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হিসেবে বুকে ধারন করে শৈশব ও কৈশোর পেরিয়ে নিজেকে গড়ে তুলেছেন এই মানুষটি। সফল স্বপ্ন কেন বলছি? কারণ, তিনি সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিতে পেরেছেন। তিনি এখন বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর মতো একটি নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাওয়া বিভাগের একজন গর্বিত সদস্য। 

 

প্রতিবেদকের একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, নিজের কর্মের কথা ভাবতেই গর্ববোধ হয় আমার। একজন মানুষ তার জীবনের সব সখ আহ্লাদ ও ভালোবাসা দিয়ে আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে নিজের মতো করে সাজিয়ে তোলে তার ঘর। সেই ঘরে যখন অগ্নিকান্ড ঘটে, তখন নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য সেই মানুষটি তার সকল ভালোবাসা দিয়ে সাজানো ঘরটি ছেড়ে বাইরে পালিয়ে যায়। আর আমি সেই ঘরটিকে রক্ষা করার জন্য নিজের জীবন বাজি রেখে প্রবেশ করি ঐ ঘরে। সফলতার সাথে নিজের শতভাগ কাজ সম্পন্ন করে যখন বেরিয়ে আসি, তখন সেই মানুষটির মুখপানে লক্ষ করি স্বস্থির চিহ্ন। যে মানুষটির মুখে কিছুখন পূর্বেও ছিল কান্নার চিৎকার, চোখে ছিল আতংকের ছাপ; সেই চোখে মুখে একফালি হাসি ফুটিয়ে তুলি আমার কর্মদক্ষতায়। এর চেয়ে বেশি গর্ব, এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি, এর চেয়ে বড় স্বার্থকতা আর কি হতে পারে তা আমার জানা নেই।

 

তিনি আরও বলেন, সর্বোপরি নিজেকে আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত রাখতে পেরে আমি ধন্য, আমার জীবন স্বার্থক। আমি বুক ফুলিয়ে মাথা উঁচু করে অহংকারের সাথে উৎফুল্লচিত্তে বলতে পারি, আমি বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগের একজন গর্বিত সদস্য। সারা জীবন এই মহৎ কর্মের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখতে চাই, এটাই আমার মনোবাসনা।

 

দেশমাতৃকার সেবায় নিয়োজিত এই অগ্নিসৈনিক বর্তমান বাগমারা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, রাজশাহী বিভাগে তে কর্মরত আছেন।

 

নাম ও স্থানীয় ঠিকানা, মোঃ মিজানুর রহমান 

গ্রাম+পোষ্টঃ উনাহত সিংড়া, থানাঃ দুপচাঁচিয়া

জেলাঃ বগুড়া।

সংবাদটি শেয়ার করুন


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Recent Comments

No comments to show.