• মঙ্গলবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ০৪:৪৫ অপরাহ্ন
Headline
সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরে পুঠিয়া দুর্গাপুরে গনসংযোগ করলেন মুনি পুঠিয়ার ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলো যেনো ঘুষের স্বর্গ রাজ্য, ছাড় পায় না ভিক্ষুকও রংপুরে উইঘুর মুসলিম নির্যাতন ও চীনের আগ্রাসন বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন নরসিংদীতে পরিক্ষা শেষে আর বাড়ি ফেরা হলো না এক এইচএসসি পরিক্ষার্থীর ফ্রিল্যান্সারদের ওপর কোনো কর আরোপ করা হয়নি: জুনাইদ আহমেদ পলক বাগমারায় এক আনসার ও তার ভাতিজা হেলালের অত্যাচারে অতিষ্ঠ গ্রামবাসি বিদেশ যেতে হলে খালেদা জিয়াকে আবার জেলে যেতে হবে, কোর্টে যেতে হবে হোটেলে ভাত খেয়ে ৩ লাখ টাকা বিল বাকি ছাত্রলীগ নেতার, থানায় অভিযোগ পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে ঈদে মিলাদুন্নবীর জশনে জুলুসে বোমা হামলায় ৫০ অধিক নিহত প্রদেশটিতে ৩ দিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে। নিহতের সংখ্যা আরো অনেক বাড়তে পারে…. রাজশাহীর পুঠিয়ায় নানান আয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন পালন

কলেজে এক অধ্যাপক, ফাঁকা ক্লাসরুমে আমার হাত চেপে ধরেছিল

Reporter Name
Update : রবিবার, ২৬ জুন, ২০২২
গল্প ২০২২
কলেজে এক অধ্যাপক, ফাঁকা ক্লাসরুমে আমার হাত চেপে ধরেছিল

বিডি নিউজ২৩/BD News23: অলক্ষ্মী! চৌদ্দ বছর বয়সে প্রথম জেনেছিলাম – আমার জন্মের খবর পেয়ে ঠাম্মা মাথায় হাত দিয়ে বারান্দায় বসে পড়েছিল। আমি, বাবা মার দ্বিতীয় কন্যা সন্তান। এই ঘটনার ঠিক দেড় বছর পর আমার ভাইয়ের জন্ম হয়।

 

ঠাম্মা আমাকে সারাজীবন ‘লক্ষ্মীছাড়ী’ বলেই ডাকতো। ছোটবেলাতেই বুঝে গিয়েছিলাম বাড়ীতে আমার আর দিদির জন্য এক রকম ব্যবস্থা, আর ভাইয়ের জন্য অন্যরকম। পুজোয় ভাইয়ের জন্য চারটে জামা; আমার আর দিদির একটা একটা। ভাইয়ের টিফিনবক্সে আপেল-কলা-মিষ্টি। আমার-দিদির যা হোক কিছু। এসব কড়া নিয়মের বাইরে বেরোনোর ক্ষমতা আমার মায়ের ছিলনা।

 

দিদিও কখনো নিয়ম ভাঙার চেষ্টা করেনি। কিন্তু আমাকে বারবার ঠাম্মার কাছে শুনতে হয়েছেঃ এ মেয়ের বড় নোলা, ভীষন লোভ, এক্কেবারে অলক্ষ্মী এসেচে কোথা থেকে।

 

তবুও আমার বায়নার অন্ত ছিলনা। মা মাঝে মাঝেই আমার বায়না মেটাতে, সবাই কে লুকিয়ে পয়সা দিত। দিদিকে কখনো কিছু চাইতে দেখিনি। আমি তখন ক্লাস সিক্স-এ। স্কুল থেকে ফিরে দেখি মা’র মুখ থমথমে। কিছু একটা হয়েছে আন্দাজ করতে পারছি। সন্ধ্যেবেলা পড়তে বসে দিদি বললঃ “তুই মা কে এত বিপদে ফেলিস কেন? আজ ঠাম্মা দেখেছে, মার থেকে লুকিয়ে পয়সা নিচ্ছিস।

 

আমার থেকে সাড়ে তিন বছরের বড় দিদি সেদিন আমাকে বুঝিয়ে ছিল এ’বাড়ীতে মেয়েদের কি কি করতে নেই।

 

মেয়েদের মুখফুটে কিচ্ছু চাইতে নেই; বেশী কথা বলতে নেই; লাফাতে নেই; দৌড়াতে নেই। মেয়েদের চিৎকার করতে নেই; ঘুড়ি ওড়াতে নেই; গুলি খেলতে নেই; পা ছড়িয়ে বসতে নেই; হা হা করে হাসতে নেই, সব সময় খাই খাই করতে নেই।

 

অবাক হয়ে সেদিন আমি নেই,য়ের ফর্দ শুনেছিলাম।

 

দিদিকে খুব বেশীদিন এত ‘নেই’ মানতে হয়নি। আমার রোগা ভোগা দিদিটা বিয়ের ধকল সামলাতে পারেনি। বিয়ের দু’বছর পর, মাত্র বাইশে, শ্বশুরবাড়ীতেই মারা যায়।

 

সেদিন প্রথম আমার মা, সারাদিন বিছানায় শুয়ে ছিল। ঠাকুমা, ভাই আর বাবার মানবিকতা বোধকে, সেই একদিনের জন্য কিছুটা জাগ্রত অবস্থায় দেখেছিলাম। সারাদিন কেউ মাকে কোন ফরমাইশ করেনি।

 

সত্যি বলব! এত দুঃখের দিনেও, *সেদিন আমার ভালো লাগছিল; একটাই কথা ভেবে “আমার কাকভোরে ওঠা মা, এই সুযোগে, একটা পূর্ণ দিনের বিশ্রাম তো পেল।

 

কলেজে এক অধ্যাপক, ফাঁকা ক্লাসরুমে আমার এক বন্ধবীর হাত চেপে ধরেছিল। ব্যাপারটা প্রিন্সিপালক কে জানাতে গেলাম। তিনি বললেন- গার্লস কলেজে ওসব হয়েই থাকে। এ’নিয়ে বেশী সোরগোল করো না। আমি দেখছি কি ব্যবস্থা নেওয়া যায়। তিনি যে কি ব্যবস্থা নিয়ে ছিলেন আজও জানতে পারিনি।

 

কিন্তু, আমার ভাই ব্যাপরটা কোন ভাবে জেনে, আমাকে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল। বাবার সামনে দাঁড়িয়ে সে সোজা ভাষায় আমাকে বললঃ তোর আর সেজেগুজে কলেজ যাবার দরকার নেই। বাড়িতে পড়ে পরীক্ষা দে।

 

আমিতো দিদির মত লক্ষ্মী মেয়ে নই, তাই অন্যের করে দেওয়া ব্যবস্থা, আমার পক্ষে মানা সম্ভব হয়নি।

 

আমার ‘মেয়েবেলার’, আর এক দিনের কথা খুব মনে পরে। বাড়ীতে কি একটা পুজো ছিল। দিদি মাকে রান্নাঘরে সাহায্য করছে। ঠাম্মা আমাকে ঠাকুরঘরে নিয়ে গিয়ে প্রসাদ, ঘট, ফুল বেলপাতা সাজানোর প্রশিক্ষন দিচ্ছে। পুজোর জোগাড় শেষ হল, আমার শিক্ষা সম্পূর্ণ হল। কিন্তু, আমার চোখ তখনো আটকে আছে, নারায়নের জন্য সাজানো প্রসাদী নৈবেদ্যর থালায়। নৈবেদ্যর চূড়ায় চূড়ামনী হয়ে বসে আছে, বেশ বড় সাইজের একটা নলেনগুড়ের সন্দেশ।

 

যথা সময়ে পুজো শেষ হল। মা প্রসাদ ভাগ করার তোরজোড় করছে। হঠাৎ‌! সবকিছু সরিয়ে, সবাইকে অবাক করে দিয়ে, আমি সেই মহার্ঘ্য সন্দেশ, ছোঁ’মেরে তুলে নিয়ে, মুখে পুড়ে দিলাম।

 

মুখভর্তি সুস্বাদে আমি তখন অবিভূত। হুঁশ ফিরল, যখন সন্দেশ ভরা গালে মায়ের প্রচন্ড এক চড় এসে পরলো। ঠাকুমার প্রভূত গালিগালাজ থেকে বুঝলাম, নৈবেদ্য যতই আমার সাজানো হোক; সেই প্রসাদের সিংহভাগের অধিকারী বাড়ীর পুরুষ সদস্যরা।

 

দু’গালে মায়ের পাঁচ আঙুলের দাগ নিয়ে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি। অনেক রাতে মায়ের ছোঁয়ায় ঘুম ভাঙলো। অভিমানে রাগে মুখ ফিরিয়ে শুয়ে রইলাম। কিন্তু, আমার চুলে হাত বুলাতে বুলাতে, মায়ের অসহায় কান্না, কোন দিন ভুলতে পারি নি।

 

মরার সময় ছেলের হাতের জল না পেলে স্বর্গবাস হয়না। ঠাম্মার এই কথাটা বাবা মনে প্রানে বিশ্বাস করতো। ভাই ছিল আমার বাবার সেই স্বর্গবাসের ইনভেস্টমেন্ট।

 

আমার ভাই, বর্তমানে ব্যাঙ্গালোরের এক বহুজাতিক সংস্থায় কর্মরত এবং বিবাহিত। তার অবাঙালী পরিবারকে নিয়ে সেখানেই নিরাপদ জীবন যাপন করছে। এ’শহরে খুব একটা আসার দরকার পরেনা। এলেও অফিসের ভি.ই.পি গেস্টহাউজে থাকে। পূর্ব-দক্ষিণ খোলা বিশাল ফ্ল্যাটের অভ্যস্থ জীবন; এ’বাড়ীর স্যাঁতস্যাতে দেওয়ালে ওদের কষ্ট হয়।

 

বাবা মারা গেছেন প্রায় দু’বছর হল। প্রভিডেন্ট ফান্ডের ষাট শতাংশ ছেলের ক্যারিয়ারে খরচ করেছেন। ইনভেস্টমেন্টের পুরোটাই যে জলে গেছে সেটা মৃত্যুর দিনেও বিশ্বাস করেতে পারেন নি।

 

ঠাকুমার প্রায় চুরাশি চলছে। বৃদ্ধার আর ছেলের হাতের জল পাওয়া হলনা। আমার ছাত্র পড়ানো আর স্কুলে চাকরীর টাকায়, সংসারটা কোনো মতে দাঁড়িয়ে আছে। সেদিন সবে বাড়ীর দরজায় পা রেখেছি। মা ছুটে এলঃ তাড়াতাড়ি আয়। সকাল থেকে কিচ্ছু খাচ্ছে না। বারবার তোকে খুঁজছে।

 

ঘরে ঢুকে বৃদ্ধার মাথার কাছে বসলাম। মনে হল আমাকে দেখে, একটু যেন হাসলো। আমার হাতে ধরা দুধের গ্লাস থেকে দু’চুমুক মুখে দিয়েই, আবার ক্লান্তিতে মাথাটা বিছানায় এলিয়ে দিল।

 

ইশারায় আমাকে কাছে ডাকলো। আমি মুখটা নামিয়ে আনলাম মুখের কাছে। খুব আস্তে, প্রায় নিভে যাওয়া কন্ঠে ঠাম্মা বললঃ “লক্ষ্মীছাড়ী বিয়ে করিস; তোর মেয়ে হতে ইচ্ছা হয়। বুড়িটাকে ক্ষমা করে দিস।

 

মা আর আমি সেদিন সারারাত জেগে বসে রইলাম। সারারাত ঠাম্মার বন্ধ চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া জল মুছলাম। এত দিন পরে বৃদ্ধার কাছে আমার ‘অলক্ষ্মী’ জন্ম সার্থক হয়েছে। সংগৃহীত

সংবাদটি শেয়ার করুন


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Recent Comments

No comments to show.