রাজশাহী প্রতিনিধিঃ এতিম,অসহায় ও দুস্থদের প্রতি স্বাভাবিকভাবেই মানুষের সহানুভূতি কাজ করে। সবাই চেষ্টা করে নিজের সাধ্যমতো এতিম ও দুঃস্থদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে, কিছুটা হলেও তদের কষ্ট লাঘব করতে। তবে মানুষের এই সহানুভূতিকে কাজে লাগিয়ে নানা ধরনের দূর্নীতির বিষয়টি নতুন নয়।
অসহায়-দুঃস্থদের প্রসঙ্গ উঠলেই মানুষ বাছবিচার ছাড়াই সাহায্য করতে এগিয়ে যায়। আর এই সুযোগটিই কাজে লাগায় কিছু অসাধু মহল। মানুষের সহানুভূতিকে পুঁজি করে দিনের পর দিন বাণিজ্য চালায় তারা। এমন দূর্নীতির জলজ্যন্ত উদাহরণ রাজশাহীর বাঘা উপজেলার সরেরহাট কল্যানী শিশু সদন। এ এতিমখানার বিরুদ্ধে “এতিম ছাড়াই সরকারি ও বেসরকারি অনুদান নেয়া হচ্ছে”- এমন অভিযোগের ভিত্তিতে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে একে একে বের হতে থাকে ‘থলের বিড়াল’। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার সাথে মিলতে থাকে আরও ভায়নক সব দূর্নীতির তথ্য।
প্রতিষ্ঠানটিতে ১০০ জন এতিমের নামে সরকারি বরাদ্দ আসছে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ি একজন এতিমের বরাদ্দ পেতে এতিমখানা কর্তৃপক্ষকে অন্তত দুইজন এতিমের ভরনপোষণের ব্যবস্থা করতে হয়। সেই হিসেবে ১০০ জনের বরাদ্দ পেতে অন্তত দুইশত জন এতিম-দুঃস্থ শিশুর ভরনপোষণের ব্যবস্থা থাকার কথা থাকলেও বাস্তব প্রেক্ষাপট ভিন্ন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় এতিম দুঃস্থ সব মিলিয়ে এতিমখানাটিতে পঞ্চাশজন নিবাসিও নেই। আর যারা আছেন তাদের মধ্যেও অনেকের বয়স ১৮ বছরের কোঠা পার করেছে অনেক আগেই। এছাড়াও কথিত এতিমদের অনেকেই এতিমখানা কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন বলে জানা গেছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে এতিমখানাটির প্রতিষ্ঠাতার ছোট ছেলে বলেন, “আমাদের এখানে বৃদ্ধ নিবাসি রয়েছেন প্রায় ৬০ জনের মত।
বৃদ্ধ নিবাসিরা এতিমের পর্যায়ে পড়ে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আামাদের বৃদ্ধাশ্রম আলাদা” তবে একপর্যায়ে ক্যাপিটেশনের টাকা বৃদ্ধাশ্রমেও খরচ হয় বলে বোঝানোর চেষ্টা করেন তিনি। সেইসাথে আশেপাশের বাড়ি থেকে কয়েকজন বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে ডেকে এনে তারা বৃদ্ধাশ্রমের নিবাসি বলে প্রচার করতে থাকেন।
এসময় তালিকা অনুযায়ি এতিমদের খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা যায় রেজিষ্ট্রার খাতায় ও ভর্তি ফরমে কয়েকজন শিশুর বাবাকে মৃত দেখানো হলেও বাস্তবে তারা জীবিত এবং সকলেই পেশাজীবি। এমন অপরাধের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমাদের সকল বিষয়েই সমাজসেবা অফিস অবগত আছেন। তারা যেভাবে বলেন আমরা সেভাবে করি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সমাজসেবা অধিদপ্তরের এক উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, আমি এখানে এতিমখানা কর্তৃপক্ষের দোষ দেখছি না। সব দোষ আমার অফিসারদের। এতিম খানাটিতে এমন দূর্নীতির বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোরবানির ঈদের আগে কোন ব্যবস্থাই নেবো না আমরা।
এদিকে এতিমখানাটির বিরুদ্ধে থাকা সকল অভিযোগের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের সময় এ প্রতিবেদককে নানা রাজনৈতিক নেতা ও বড় বড় সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রাণনাশের হুমকিও দেয়া হয়। এ ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলমান।
(বিঃদ্রঃ- এই পর্বে এতিমখানার দূর্নীতিগুলো তুলে ধরা হয়েছে। আগামী পর্বে এই দূর্নীতির নেপথ্যে কারা আর তাদের সাথে এসব রাজনীতিবিদ এবং সরকারি কর্মকর্তাদের যোগসূত্র কোথায় সে রহস্যের উন্মোচন করা হবে।)