বিডি নিউজ২৩/BD News23: নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে রাজধানীর কোতোয়ালি থানার তিন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বাদী। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে সম্প্রতি লিখিতভাবে এ অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী রাজীব কর।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সদর দপ্তরকে চিঠি দেয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। এতে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, জানতে চাওয়া হয়। চিঠির জবাব দেওয়ার জন্য প্রথমে ১৯ মে ও পরে ২৫ মে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনো জবাব পাওয়া যায়নি বলে নিশ্চিত করেছেন কমিশনের সার্বক্ষণিক সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদ।
গত ৩ মার্চ রাজীব করের করা মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন কোতোয়ালি থানার সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান (৪০), সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ফরিদ ভূঁইয়া (৩৫) ও এসআই জলিল (৩৫)। মহানগর দায়রা জজ আদালতের নির্দেশে এই মামলার তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)
‘রাজীব কর’ একটি স্বর্ণের দোকানে কাজ করতেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৯ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে এসআই মিজানুর রহমান ও এএসআই ফরিদ ভূঁইয়া রাজধানীর গোয়ালনগরের বাসা থেকে তাঁকে ধরে নিয়ে যান। এক রাতে তিনি নির্যাতনে তিনবার জ্ঞান হারান। প্রথমে তাঁকে ব্যাট দিয়ে পেটায়, বুট দিয়ে মুখ মাড়িয়ে দেয় ও প্লাস দিয়ে নখ তুলে নেয়। সবশেষে উলঙ্গ করে পুরুষাঙ্গে বৈদ্যুতের শক দেয়।
রাজীব করের অভিযোগ, তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ সদস্যরা বাসা থেকে তাঁর স্ত্রী ও মায়ের ২৮ ভরি সোনা, মায়ের চোখের অস্ত্রোপচারের জন্য রাখা ৪১ হাজার ৩০০ টাকা, মোবাইল, ল্যাপটপ ও ব্যাগে রাখা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে যান। পরদিন পরিবারের সদস্যরা দুই লাখ টাকা দিয়ে তাঁকে ছাড়িয়ে আনেন।
ঘটনার পর বছরখানেক অসুস্থতার কারণে রাজীব কুমিল্লায় গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। কিছুটা সুস্থ হয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বিচার চেয়ে চিঠি দেন। তবে ঢাকায় আর পাকাপাকিভাবে ফিরতে পারেননি। এখন পর্যন্ত তিনি স্বর্ণালংকার ও টাকা ফেরত পাননি।
পুলিশ কীভাবে হুমকি দিচ্ছে, জানতে চাইলে রাজীব কর বলেন, তাঁর এই অভিযোগ পুলিশ সদর দপ্তর, ঢাকা মহানগর পুলিশ, গোয়েন্দা বিভাগ, পুলিশের ওয়ারী বিভাগ ও রাঙামাটি জেলা পুলিশ তদন্ত করেছে। এখন করছে পিবিআই। তদন্ত চলার সময়ই এসআই মিজানুর তাঁকে বলেন, এত হাঙ্গামা হবে জানলে আর রাজীবকে বাঁচিয়ে রাখতেন না। পিবিআই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে, রাজীব করও সঙ্গে যান। তখন স্থানীয় লোকজন বলেন, পুলিশ নিয়মিত তাঁর খোঁজে বাসায় যায়। দুটি মুঠোফোন নম্বর থেকেও ফোন করে মিটমাট করার জন্য জোরাজুরি করা হচ্ছে। পুলিশ চাইলে অনেক কিছুই করতে পারে—এমনও বলা হচ্ছে।
ওই দুই মুঠোফোন নম্বরের একটি ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ বিভাগের। অন্যটি লালবাগ বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মুহিত কবিরের সরকারি নম্বর। মামলা মিটমাটের জন্য চাপ প্রয়োগের অভিযোগ অস্বীকার করে মুহিত কবির প্রথম আলোকে বলেন, রাজীব কর অভিযোগ করেছেন তাঁকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কে কীভাবে হুমকি দিচ্ছে জানতে তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। চিঠিও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি সাড়া দেননি।
মামলায় যে তিনজনকে আসামি করা হয়েছে, তাঁদের খুদে বার্তা পাঠিয়ে ফোন করা হয়। সাড়া পাওয়া গেছে শুধু উপপরিদর্শক মো. জলিলের। তিনি বলেন, তাঁর নামে কোনো মামলা হয়েছে কি না, সে খবর জানেন না। তাঁর সঙ্গে পিবিআই কথা বলেনি।
যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে পিবিআইয়ের বিশেষ সুপার কুতুবুর রহমান চৌধুরীও ফোন ধরেননি।
রাজীব কর প্রথম আলোকে বলেন, তাঁকে নির্যাতনের খবর জানাজানি হয়ে গেলে পুলিশের পক্ষ থেকে গুজব রটানোরও চেষ্টা করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, তিনি ভারতীয় এক নাগরিকের কাছ থেকে সোনা কেড়ে নিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওই নাগরিককে পুলিশ হাজির করতে পারেননি। এমনকি পুলিশ তাঁর নামে কোনো মামলাও করেনি। কেন তাঁকে ধরে নিয়ে যাওয়া হলো, সে সম্পর্কে তিনি কিছুই বুঝতে পারছেন না।
উল্লেখ্য, নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন–২০১৩তে এখন পর্যন্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ২৮টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১টিতে নিম্ন আদালতে রায় হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীরা চেপে যান বা আপস করে ফেলেন। তবে রাজীব কর বলেছেন, তিনি এই মামলা তুলবেন না। (সূত্র: প্রথম আলো) (Source & credit by prothom alo)