বাগমারা প্রতিনিধিঃ প্রায় ১০ বছর আগে মালামাল নিয়ে রাজশাহী থেকে ঢাকা যাবার পথে মহাসড়কে এক সড়ক দূর্ঘটনায় একটি পা হারান ট্রাকচালক আব্দুর রাজ্জাক। দরিদ্র আব্দুর রাজ্জাকের জীবনে অন্ধকার নামে ঠিক তখন থেকেই। নিজের চিকিৎসার খরচ জোগাতে আর সংসার চালাতে মাকে নিয়ে ভিক্ষা করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিলো না রাজ্জাকের। ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ভিক্ষা করতেন রাজ্জাক ও তার মা।
এভাবে কয়েকবছর কেটে যাবার পর ভিক্ষার টাকা জমিয়ে ও আরো কিছু টাকা ধার দেনা করে ৪ লাখ টাকা দিয়ে রাজশাহীর রাজপাড়ার মেসার্স আর পি ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি শোরুম থেকে সেকেন্ড হ্যান্ড টিভিএস সিএনজি কেনেন রাজ্জাক। ভিক্ষার অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে এটিই ছিলো তার শেষ প্রচেষ্টা। এক পা দিয়েই যতোটা সম্ভব সিএনজি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে চাচ্ছিলেন রাজ্জাক। কিন্ত দুঃখ যেনো এখনো পিছু ছাড়েনি অসহায় প্রতিবন্ধী রাজ্জাকের। রাজপাড়ার যে শোরুম থেকে রাজ্জাক সিএনজি টি কিনেছিলো সেই আরপি ইন্টারন্যাশনাল শোরুম থেকেই প্রতারণার শিকার হন আব্দুর রাজ্জাক৷ টিভিএসের সিএনজি বলা হলেও পরে দেখা যায় টিভিএস কোম্পানির ভুয়া সিল লাগিয়ে এটি বিক্রি করেছে ঐ শোরুমটি৷ এছাড়া শোরুম থেকে রাজ্জাককে সিএনজির কাগজপত্র যা দেয়া হয়েছে, পরীক্ষা করে দেখা যায় তার সবই ভুয়া। বিষয়টি শোরুম মালিক কুদরত ইলাহী কে জানালে তিনি উল্টো হুমকি দেন প্রতিবন্ধী রাজ্জাককে।
বলেন মুখ বন্ধ রাখতে। শেষ সম্বলটুকু দিয়ে সিএনজি কিনে এখন তাই হয়রানির শিকার প্রতিবন্ধী আব্দুর রাজ্জাক। এ বিষয়ে তিনি গত রাজপাড়া থানা ও র্যাব-৫ বরাবর একটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন, কিন্ত কোন সাড়াই পাননি। আরপি ইন্টারন্যাশনাল নামের শোরুমটির প্রতারণায় সঠিক কাগজ না পাওয়ায় গাড়ি জব্দ হবার ভয়ে সড়কেও চালাতে পারছেন না সিএনজিটি। বিষয়টি নিয়ে অগ্রযাত্রা’র অনুসন্ধানে ঠিক একই ভাবে কুদরত ই ইলাহীর আরপি ইন্টারন্যাশনাল নামের শোরুম থেকে সিএনজি কিনে প্রতারিত আরো কয়েকজনের সন্ধান মিলেছে৷ টুটুল নামে আরো একজন ভুক্তভোগী অগ্রযাত্রা কে জানান, তিনি এখান থেকে সিএনজি কিনে কাগজপত্র ও নামের মিল পাননি। উল্টো তার মোটা অংকের টাকা গচ্ছা গেছে।
গোপন সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী এ শোরুমটিতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে চোরাই সিএনজি এনে তা মডিফাই করে ভুয়া কাগজ দিয়ে বিক্রি করা হয়। সর্বশেষ অনুসন্ধানী তথ্য মোতাবেক- গত ১১ জুন আরো দুটি সিএনজি গাড়ি কুদরত এলাহীর গ্যারেজে দেখা গেছে৷ জানা গেছে এগুলো চট্টগ্রাম থেকে আনা হয়েছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রশাসন গ্যারেজটিতে অভিযান চালালেই বেরিয়ে আসবে আসল তথ্য। আর ভুক্তভোগীদের প্রতারিত হবার বিষয়টিও দ্রুত ব্যবস্থা নেবার দাবি জানিয়েছে তারা।