রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় অপরাধ না করেও শুধুমাত্র আসামির সঙ্গে নাম-ঠিকানার মিল থাকায় ১১ ঘণ্টা হাজতে কাটালেন আব্দুর রাজ্জাক সরদার (৫৩) নামে এক রাজমিস্ত্রি।
বৃহস্পতিবার (২ জুন) দিবাগত গভীর রাতে উপজেলার যোগিপাড়া ইউনিয়নের বাজেকোলা গ্রামের নিজ বাড়িতে ঘুম থেকে ডেকে তুলে আব্দুর রাজ্জাককে নিয়ে যায় বাগমারা থানা পুলিশ।
পেশায় রাজমিস্ত্রি আব্দুর রাজ্জাক সরদার ওই গ্রামের গরিবুল্যা সরদারের ছেলে। আব্দুর রাজ্জাকের রাত কাটে উপজেলার ভাগনদী পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের হাজতখানায়। শুক্রবার (৩ জুন) সকালে তাকে নেওয়া হয় বাগমারা থানাহাজতে। পরে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও পরিবারের প্রচেষ্টায় প্রকৃত আসামি ধরা পড়ায় থানা থেকেই মুক্তি পান আব্দুর রাজ্জাক সরদার।
মামলার প্রকৃত আসামি আব্দুর রাজ্জাকের বাবার নামও গরিবুল্যাহ। তবে তার বাড়ি আব্দুর রাজ্জাক সরদারের বাড়ি থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরের গনিপুর ইউনিয়নের আরেক বাজেকোলা গ্রামে। জানা গেছে, ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি আব্দুর রাজ্জাকের নামে তারই সাবেক স্ত্রী রিনা বেগম নারী নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেন। পরে আদালত আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
আব্দুর রাজ্জাক সরদারের স্ত্রী জিন্নাতুন নেসা জানান, তারা রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়েছিলেন। রাত ১টার দিকে বাড়িতে পুলিশ আসে। পরিচয় নিশ্চিত হয়ে তিনি দরজা খোলেন। বাড়িতে ঢুকেই ভাগনদী পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের উপপরিদর্শক আবুল কালাম তার স্বামীর খোঁজ করেন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে জানিয়ে পুলিশ তার স্বামীকে ঘুম থেকে তুলে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যায়। ওই সময় তাদের কোনো কথাই শোনেনি পুলিশ। শুক্রবার সকাল থেকে আব্দুর রাজ্জাক সরদারকে ছাড়িয়ে নিতে তৎপরতা শুরু করে পরিবার। আব্দুর রাজ্জাক সরদারের ভাই রেজাউল করিম জানিয়েছেন, তারা মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া তৎকালীন উপপরিদর্শক, গনিপুর ইউপি চেয়ারম্যান, মামলার বাদীসহ স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে ভাইয়ের মুক্তিতে তাদের সহযোগিতা চান।
সবাই প্রকৃত আসামির পরিচয় ও অবস্থান নিশ্চিত করার পর পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়। এরপর গ্রাম পুলিশের সহায়তায় প্রকৃত আসামি আব্দুর রাজ্জাককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে গনিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান গণমাধ্যমকে জানান, স্ত্রীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রকৃত আসামি আব্দুর রাজ্জাকের সালিস হয়েছিল ইউনিয়ন পরিষদে। ফলে আব্দুর রাজ্জাককে সহজেই তিনি শনাক্ত করতে পারেন।
পাশের ইউনিয়নের আব্দুর রাজ্জাক সরদারের পরিবারের কাছে থেকে বিষয়টি জানতে তিনিই তাদের প্রকৃত আসামির সন্ধান দেন। পুলিশ গিয়ে ওই আসামিকে গ্রেপ্তার করে। এই ঘটনায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন আব্দুর রাজ্জাক সরদার। মুক্তির পর তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, নাম ও ঠিকানার মিল থাকায় তাকে নাজেহাল হতে হয়েছে। আসল আসামির খোঁজ না পাওয়া গেলে শেষ পর্যন্ত হয়তো কারাবাস করতে হতো। তখন এর দায় কে নিত?
এ বিষয়ে ভাগনদী পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের উপপরিদর্শক আবুল কালাম জানান, দুজনের নাম, তাদের বাবার নাম, এমনকি গ্রামের নামেও মিল রয়েছে। এ কারণেই তাকে থানায় নিতে বাধ্য হয়েছে পুলিশ। তবে শেষ পর্যন্ত তারা প্রকৃত আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছে। এরপরই মুক্তি দেওয়া হয়েছে অন্যজনকে।