বিডি নিউজ২৩/BD News23: চলুন আজকে আপনাদের সবাইকে ঘুরিয়ে আনি কাঁচা আমের জিলাপির দোকান থেকে। রাজশাহী শহরের উপশহর নামক স্থানে রসগোল্লা নামের দোকানে তৈরি করা হয় কাঁচা আমের অন্যরকম সাধের জিলাপি। প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ ভিড় করছেন এই জিলাপি কেনার জন্য। অনেক দূর দূরান্ত থেকে অনেকেই মেসেজ করছেন তাদের কাছে পাঠানো যাবে কিনা ভিডিওর মাধ্যমে আপনাদের কাছে বলে দিই এভাবে অনেক দূরে জিলাপি পাঠানো সম্ভব নয় কাঁচা আমের জিলাপি খেতে হলে অবশ্যই রাজশাহী শহরে আসতে হবে আপনাকে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, মধ্যযুগে ইরান থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে থিতু হয়েছে জিলাপি। এখন এই অঞ্চল জুড়ে জিলাপির রাজত্ব। তবে অঞ্চল ভেদে জিলাপির স্বাদের বেশ তারতম্য রয়েছে। পুরাণ ঢাকার ঐতিহ্য বহন করছে শাহী জিলাপি। চালের গুঁড়ার সঙ্গে তেঁতুলের টক- তাতেই তৈরি হয় ময়মনসিংহের জগৎবিখ্যাত চিকন জিলাপি।
হয়তো এই তালিকার পরের নামটি রাজশাহীর। আমের প্রসঙ্গ তুলতেই চলে আসে রাজশাহীর নাম। সেই আম এবার যুক্ত হলো জিলাপিতে। জিভে জল আনা কাঁচা আমের জিলাপি এনেছে রাজশাহীর ‘রসগোল্লা
সেই সঙ্গে রাজশাহীর আরেক ঐতিহ্য মাসকলাইয়ের জিলাপিও এনেছে। এরই মধ্যে মিষ্টি ও মিষ্টিজাত পণ্যে নতুনত্ব এনে তাক লাগিয়ে দিয়েছে রাজশাহীর এই উদ্যোগ।
রসগোল্লার তরফ থেকে জানানো হয়েছে, শুক্রবার (৭ এপ্রিল) প্রথমবারেরমতো তারা কাঁচা আমের জিলাপি ক্রেতাদের সামনে এনেছেন। আর তাতেই পড়েছে হুলুস্থুল। যদিও প্রথম রোজা থেকেই রসগোল্লার দুটি বিক্রিয় কেন্দ্রে মিলছে মাসকলাইয়ের জিলাপি।
বেলা ৪টার দিকে নগরীর উপশহর নিউমার্কেট এলাকার রসগোল্লার বিক্রয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় ক্রেতাদের ভিড়। ইফতারের তখনো অনেক দেরি। তবুও ইফতার অনুসঙ্গ হিসেবে কাঁচা আমের জিলাপি নিতে ভিড়
বিক্রয় কেন্দ্রের সামনেই বসানো হয়েছে অস্থায়ি চুলা। সেখানেই জিলাপি ভাজছিলেন কারিগর মাসুম আলী। রস থেকে তুলে রাখার ফুসরত নেই। সঙ্গে সঙ্গে শেষ! বিরাম নেই কারিগর-বিক্রয়কর্মীর।
কাজের ফাঁকে কথা হয় মাসুম আলীর সঙ্গে। তিনি জানান, প্রায় পনেরো বছর ধরে জিলাপি তৈরি করেন। কিন্তু কখনোই কাঁচা আমের জিলাপি তৈরি করেননি। জিলাপি তৈরির মূল উপকরণের সঙ্গে কাঁচা আম ব্লেন্ড করে যুক্ত করছেন। সেই সাথে দিচ্ছেন ফ্লেভার। সুস্বাদু এই জিলাপি যে কারো মন ভোলাবে।
মাসুম আলী আরও জানান, রসগোল্লায় মিলছে মাষকলাইয়ে আটার জিলাপি। বিশেষ এই জিলাপি চিনির রসের পরিবর্তে ডোবানো হচ্ছে খেজুরগুড়ের রসে। তাদের এই দুই ধরনের জিলাপি পুরোপুরি স্বাস্থ্যকর।
গৃহিণী হাসিনা বেগম ওই পথ ধরে যাচ্ছিলেন। তার দৃষ্টি কাড়ে কাঁচা আমের জিলাপি। সঙ্গে করে নিয়েও যান। তিনি জানান, কখনোই তিনি কাঁচা আমের জিলাপি খাননি। তাছাড়া এটি দেখেতে ভালো লাগছে। সবমিলিয়ে তিনি এই জিলাপির স্বাদ নিতে চান। দামে তার আপত্তি নেই। ভালো জিনিষের দাম একটু বেশিই পড়ে বলেও জানান এই ক্রেতা।
কাঁচা আমের জিলাপি নজর কেড়েছে আরেক ক্রেতা ইখলাস হোসেন সেলিমেরও। তিনি জানান, রসগোল্লায় এর আগেও তিনি এসেছেন। এখানকার মিষ্টিগুলোর স্বাদে ভিন্নতা পেয়েছেন। তার ধারণা- এখানকার ইফতার আয়োজনেও ভিন্নতা থাকবে। এসে সেটিই পেয়েছেন। কাঁচা আমের জিলাপি তার নজর কেড়েছে। প্রথম দিনই তিনি বিশেষ এই জিলাপির স্বাদ নিতে চান। নগরীর ভদ্রা এবং উপশহর নিউমার্কেটে রসগোল্লার বিক্রয়কেন্দ্রে ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে কাঁচা আমের জিলাপি। এ ছাড়া মাষকলাইয়ের জিলাপি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়।
রসগোল্লার বিক্রয়কর্মী নাজমুল হক জানান, তারা বেলা ২টার পর থেকে ইফতারের পসরা নিয়ে হাজির হন। তাদের প্রধান আকর্ষণ মাষকলাইয়ের জিলাপি। নতুন করে যুক্ত হলো কাঁচা আমের জিলাপি। সাথে রেশমি জিলাপিও আছে। ক্রেতারা সামনে দাঁড়িয়ে থাকছেন। গরম গরম জিলাপি তারা ক্রেতাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। এর বাইরে বিশেষ ফিরনি, বোরহানি, মাঠা এবং বুনদিয়া রয়েছে তাদের।
রসগোল্লার উদ্যোক্তা আরাফাত রুবেল জানান, রোজায় তারা দুটি ভিন্ন ইফতারসামগ্রী যুক্ত করেছেন। এর মধ্যে একটি মাসকলাইয়ের জিলাপি। অন্যটি কাঁচা আমের জিলাপি।
রুবেল বলেন, মৌসুমের শুরুতে প্রচুর পরিমাণে গুটি আম ঝরে যায়। আমরা সেগুলো জিলাপিতে ব্যবহার করেছি। ফলে জিলাপি খেতেও বেশ সুস্বাদু হয়েছে।
রাজশাহীর ঐতিহ্য মাসকলাইয়ের রুটি। সেই আটা দিয়ে আমরা জিলাপি বানাচ্ছি। এটিও খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু। এই জিলাপিতে আমরা চিনির পরিবর্তে খেজুরের রস এবং আখের গুড় ব্যবহার করছি। এতেও স্বাস্থ্য ঝুঁকি অনেক কম।
এর পাশাপাশি আমরা শাহি ফিরনি এনেছি। যা দিল্লির ঐতিহ্যবাহী ফিরনির রেসিপিতে তৈরি। ক্রেতাদের মাঝে আমরা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি