• সোমবার, ০২ অক্টোবর ২০২৩, ০৪:৫৬ অপরাহ্ন
Headline
পুঠিয়ার ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলো যেনো ঘুষের স্বর্গ রাজ্য, ছাড় পায় না ভিক্ষুকও রংপুরে উইঘুর মুসলিম নির্যাতন ও চীনের আগ্রাসন বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন নরসিংদীতে পরিক্ষা শেষে আর বাড়ি ফেরা হলো না এক এইচএসসি পরিক্ষার্থীর ফ্রিল্যান্সারদের ওপর কোনো কর আরোপ করা হয়নি: জুনাইদ আহমেদ পলক বাগমারায় এক আনসার ও তার ভাতিজা হেলালের অত্যাচারে অতিষ্ঠ গ্রামবাসি বিদেশ যেতে হলে খালেদা জিয়াকে আবার জেলে যেতে হবে, কোর্টে যেতে হবে হোটেলে ভাত খেয়ে ৩ লাখ টাকা বিল বাকি ছাত্রলীগ নেতার, থানায় অভিযোগ পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে ঈদে মিলাদুন্নবীর জশনে জুলুসে বোমা হামলায় ৫০ অধিক নিহত প্রদেশটিতে ৩ দিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে। নিহতের সংখ্যা আরো অনেক বাড়তে পারে…. রাজশাহীর পুঠিয়ায় নানান আয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন পালন পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)কে স্বাগত জানিয়ে পুঠিয়ার বানেশ্বরে র‌্যালী

বিসিএস ক্যাডার ছেলে চালাচ্ছেন বাবার মুদি দোকান

Reporter Name
Update : বৃহস্পতিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২২

বিডি নিউজ২৩/BD News23: দরিদ্র পরিবারের সন্তান মো. শাহিন। তার বাবা মুদি দোকানি। মা সংসারের কাজের পাশাপাশি সেলাইয়ের কাজ করেন। সেলাইয়ের কাজ করে তিনি যে টাকা উপার্জন করেছেন তা ছেলে শাহিনের পড়াশোনার পেছনে খরচ করেছেন। মায়ের কষ্ট আজ লাঘব হয়েছে। শাহিন ৪০তম বিসিএসে কৃষি ক্যাডারে মেধা তালিকায় তিনি ১৭তম হয়েছেন। সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হিসেবে।

টাঙ্গাইলের গোপালপুর পৌরসভার তামাকপট্টি এলাকার মো. আসলাম ও নূরজাহান দম্পতির ছেলে মো. শাহিন। ছোটবেলা থেকেই তিনি খুব মেধাবী। তারা চার ভাই ও এক বোন। ভাই-বোনদের মধ্যে তিনি তৃতীয়। ২০১০ সালে গোপালপুর দারুল উলুম কামিল মাদ্রাসা থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে দাখিল পাস করেন। এরপর গোপালপুর কলেজ থেকে ২০১২ সালে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করে ২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন শাহিন। সেখানে ২০১৭ সালে কৃষি অনুষদ থেকে প্রথম বিভাগ পেয়ে অনার্স শেষ করেন। সেখান থেকেই উদ্যানতত্ত্ব বিভাগ থেকে মাস্টার্স শেষ করেন প্রথম বিভাগে।

সরেজমিনে শাহিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, বাবার দোকানে বসে দোকানদারি করছেন শাহিন। দোকানে আসা ক্রেতাদের কাছে পণ্য বিক্রি করছেন। এর ফাঁকে ফাঁকে বই পড়ছেন। তাদের জরাজীর্ণ বসবাসের একটি ঘরের সামনের অংশে দোকান। পেছনের অংশে তাদের পড়াশোনার কক্ষ। আরেক থাকার কক্ষে মা নূরজাহান সেলাইয়ের কাজ করছেন। একসঙ্গে লাগানো দুটি পড়ার টেবিলে তারা তিন ভাই-বোন পড়াশোনা করেন। তাদের বাবা স্ট্রোক করায় এখন আর তেমন কাজ করতে পারেন না, ঠিকমতো কথাও বলতে পারেন না। তার বড় ভাই দোকানে বসে যে টাকা উপার্জন করেন, সেই টাকায় তাদের সংসার চলে।

স্থানীয় নূরে আলম জানান, পরিবারটি খুবই অসহায়। তবে সন্তানরা পড়াশোনায় ভালো থাকায় তাদের বাবা-মা কঠোর পরিশ্রম করে টাকা উপার্জন করে সংসার চালানোর পাশাপাশি সন্তানদের লেখাপড়া করিয়েছেন। জমিজমা বলতে একটি ঘর ছাড়া তাদের কিছুই নেই। মা নূরজাহান সেলাইয়ের কাজ করেন। বাবা আসলাম ও ভাই তাওহীদ ছোট্ট দোকানে চালান। এতে যা উপার্জন হয় তাতে খুব কষ্টে তাদের সংসার চলে।

স্থানীয় তোষক ব্যবসায়ী সাইফুদ্দিন বলেন, শাহিন ছোটবেলা থেকেই মেধাবী। ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়, শাহিন সেটা দেখিয়ে দিয়েছে। পড়াশোনার পাশাপাশি সে দোকানদারি করেছে এবং পরিবারকে সহায়তা করেছে।

স্থানীয়রা বলেন, শাহিন লেখাপড়ার পাশাপাশি বাবার সঙ্গে দোকানদারি করেছে। আমরা দেখিছি সে দোকানে বেচাকেনার পাশাপাশি বই পড়েছে। এখনও বাড়িতে আসলে দোকানে বসে। তার বিসিএস হওয়ার পেছনের গল্প খুবই করুণ। এই পরিবার থেকে কেউ বিসিএস ক্যাডার হবে এটা কল্পনাও ছিল না।
শাহিনের বড় ভাই তাওহীদ বলেন, ছোট থেকেই বাবার সঙ্গে দোকানদারি করেছি। বাবা এখন দোকান করতে পারেন না, তাই আমি দোকান চালাই। ছোট ভাই শাহিন বাড়িতে আসলেই দোকানে বসে। ভাইদের মধ্যে সে খুব মেধাবী।

শাহিনের মা নূরজাহান বলেন, অনেক কষ্ট করে ছেলেকে পড়াশোনা করিয়েছি। সেলাই করে যে টাকা উপার্জন হতো সব টাকাই ছেলের পেছনে ব্যয় করতাম। যাতে সে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে। ছেলেও অনেক কষ্ট করেছে। মায়ের কষ্ট ছেলে লাঘব করেছে। মা হিসেবে আমি খুবই গর্বিত ও আনন্দিত।

কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত শাহিন বলেন, আমার এই পর্যন্ত আসার পেছনে মায়ের অবদান সবচেয়ে বেশি। মা তোষক, মশারি, লেপ সেলাই করে যা উপার্জন করতেন তা দিয়ে আমাদের ভাই-বোনদের পড়াশোনার খরচ চালাতেন। এছাড়াও ছোট দোকানের আয় থেকে কোনো মতে সংসার চলত। স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করার পাশাপাশি দোকানদারি করে বাবাকে সহায়তা করতাম।

ময়মনসিংহে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর তেমন দোকানে বসতে পারিনি। এর মধ্যে বাবা অসুস্থ হওয়ায় বড় ভাই দোকান চালান। যখন বাড়িতে আসতাম তখন দোকানে বসতাম। শৈশব ও কিশোরে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। তিনি বলেন, আমার লেখাপড়ার হাতেখড়ি আমার মায়ের কাছে। মা সব সময় সাহস যোগাতেন, বলতেন তুমি পারবে।

গোপালপুর দারুল উলুম কামিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. শরাফত উল্লাহ বলেন, শাহিনের সাফল্যে আমরা গর্বিত। এই মাদ্রাসা থেকে ভালো রেজাল্ট করে সে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে বিসিএস ক্যাডার হয়েছে। এতে শিক্ষকরা খুবই আনন্দিত।

সংবাদটি শেয়ার করুন


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Recent Comments

No comments to show.