বিডি নিউজ২৩/BD News23: মেয়ে সরকারি মেডিক্যাল কলেজে পড়ার সুযোগ পাওয়ার খবরে কেঁদে ফেলেন রিকশা চালক বাবা গো’লাম মোস্তফা। কারণ রিকশা চালানোর কারণেই মে’য়েকে বিয়ে দেয়ার তিন মাস পর সংসার ভেঙ্গেছে। আর সেই থেকে তাঁর প্রতিজ্ঞা ছিল শতক’ষ্ট হলেও মে’য়েকে উচ্চ শিক্ষিত করার। আল্লাহ তার সেই আশা পূরণ করলেও রিকশা চালিয়ে মে’য়ের এমবিবিএস পড়ার খরচ চালানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তার।
জয়পুরহাট সদর উপজে’লার নিভৃত পল্লী কয়তাহার গ্রামের হতদরিদ্র গো’লাম মোস্তফা পেশায় একজন রিকশা চালক। স্ত্রী’ তাহমিনা বেগম গৃহিনী। দুই মে’য়ের মধ্যে শারমিন আক্তার সুমি ছোট। বড় মে’য়েকে নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বিয়ে দিয়েছেন। সুমি এবার কালাই সরকারি মহিলা কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ ৫ পেয়ে উর্ত্তীন হয়েছে। এবারের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় ৭৭.০৫ স্কোর নিয়ে রংপুর মেডিক্যাল কলেজে পড়ার সুযোগ পায় অদম্য মেধাবী সুমি। মেডিক্যালে কোচিং করার জন্য টাকা দিতে পারেন নি গো’লাম মোস্তফা।
মে’য়ের এমবিবিএস পড়ার সুযোগ লাভের খবরে চোখের পানি ধওে রাখতে পারেননি পিতা গো’লাম মোস্তফা। মে’য়েকে বিয়ে দেওয়ার পরে রিকশা চালকের মে’য়ে হওয়ায় তাকে গ্রহণ করেনি ছে’লে পক্ষ। বিয়ের তিন মাস পর গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর তালাক দেয়া হয়। বিয়ের মেহেদি মুছতে না মুছতে তালাক পত্র পেয়ে কেঁদেছিল মে’য়ে শারমিন আক্তার সুমির সঙ্গে পিতা গো’লাম মস্তোফাও। আর তখন থেকেই ঘুরে দাঁড়ানোর শপথ নেয় সুমি।
ছোট বেলা থেকেই সুমি ছিল মেধাবী। কোন প্রাইভেট ছাড়াই এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হওয়ায় পর বৃত্তিও লাভ করে। ভর্তি হয় রাজশাহী সরকারি কলেজে। কিন্তু অর্থাভাবে রাজশাহী ছেড়ে বাড়ি এসে স্থানীয় কালাই সরকারি মহিলা কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয় সুমি। বাড়ি থেকে কলেজের দুরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। তাই অধিকাংশ সময় বাড়িতেই লেখাপড়া করে জিপিএ ৫ পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হয় সুমি।
ছোট বেলা থেকেই তার ইচ্ছে ছিল ভালো চিকিৎসক হওয়ার। কিন্তু মেডিকেল কোচিং করার মত সাম’র্থ না থাকায় সুমি প্রস্তুতি নেয় বিশ^বিদ্যালয়ে পড়ার। এ অবস্থায় কোন প্রস্তুতি ছাড়াই মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সুমি ৭৭ দশমিক ৫ স্কোর পেয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস পড়ার যোগ্যতা অর্জন করেন।
রবিবার সকালে জয়পুরহাট সদর উপজে’লার কয়তাহার গ্রামে খোঁজ নিতে গিয়ে কথা হয় সুমির বাবা গো’লাম মোস্তফার সাথে। তিনি বলেন,‘নিজের জমি-জমা নেই। মে’য়েটা পড়ালিখা করছে। ছোট বেলা থেকেই ও মেধাবী। ওর পড়ালিখা ছাড়াও সংসারের খরচ চালানোর জন্য আমি রিকশা চালায় সিলেট শহরে। অভাব-অনটনের জন্য গত বছর মে’য়েটাকে ভালো ঘর-বর পেয়ে বিয়েও দিয়েছিলাম। কিন্তু আমি রিকশা চালায় জন্য ছে’লে পক্ষ মাত্র তিন মাসের মা’থায় মে’য়েটাকে তালাক দেয়। মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়লেও লেখাপড়া চালিয়ে যায় সুমি।
কোচিং করতে কোন খরচও দিতে পারিনি। তারপরও নিজের ইচ্ছায় মে’য়েটি এমবিবিএস এ পড়ার জন্য ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। মে’য়েটির লেখাপড়া যাতে বন্ধ না হয় অভাবের কারনে সেই দুশ্চিন্তায় দু’চোখ মুছতে থাকেন গো’লাম মোস্তফা’। ওই গ্রামের ইউপি সদস্য আবু তাহের বলেন,‘লেখাপড়ার খরচ জোগাতে না পেরে হঠাৎ করে সকলের নিষেধ সত্বেও মেধাবী মে’য়েটির বিয়ে দেয় ওর পরিবার। কিন্তু গরীব বলে সংসার ভেঙ্গে যায়।
সুমি ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেয়েছে জেনে গ্রামবাসি খুবই আনন্দিত। স্থানীয় মাধাই নগর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এনামুল হক বলেন,‘সুমি অ’ত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থী। স্কুলের প্রতিটি পরীক্ষায় সুমির অর্জন ছিল শতভাগ নম্বর। সুমি বলেন, নিজের চেষ্টায় চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেও অর্থাভাবে তা ভেস্তে যায় কি-না তা নিয়ে কুল কিনারা পাচ্ছি না। জানিনা চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করার স্বপ্ন আদৌ পূরণ হবে কি-না।